কক্সবাজার অফিস :
সাংবাদিক ও পরিবেশের নাম ব্যবহার করে বনভূমি ধ্বংস এবং পাহাড় কেটে প্লট বাণিজ্যের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
গত ১৪ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মুসাইব ইবনে রহমানের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এজাহার জমা দেন। পরের দিন আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ) এ মামলাটি গ্রহণ করেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গোপন সূত্রে প্রাপ্ত অভিযোগ এবং পরিচালক মহোদয়ের মৌখিক নির্দেশে গত ১২ মার্চ বিকাল ২টায় খুরুশকুল পূর্ব হামজার ডেইল বনাকাটা এলাকায় বাদী কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মুসাইব ইবনে রহমান ও পরিদর্শক ফাইজুর রহমান সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
এ সময় এলাকাবাসী সর্বাত্মক সহযোগিতা করে তথ্য প্রদান করেন। একপর্যায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন যাওয়ার খবর পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়।
পরিদর্শনকালে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে ৫০ ফুট উঁচু পাহাড়ের ৩০ শতকের বেশি অংশ কেটে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত এক বছর দুই মাস ধরে পাহাড় কেটে প্লট বাণ্যিজ্য করেছে।
উল্লেখ্য যে, পূর্বেও এই এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে মামলা হয়েছিল জানান স্থানীয়রা। আসামিরা আবারও যোগসাজসে পাহাড় কেটে প্লট বাণিজ্য করতেছে এ রকম সুস্পষ্ট আলামত পাওয়ায় বাদী এ মামলা করেছেন বলে জানান।
পরিবেশ আাইনের ৬(খ) ও ১২ ধারা লঙ্গন করে একই আইনের ১৫(১) টেবিলের ৫, ১২ ও ১৩ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০): পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি গ্রহণ ব্যতিরেকে অবৈধভাবে পাহাড় কর্তনের ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করার অপরাধে মামলাটি রুজু হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুল ইউনিয়নের কুলিয়াপাড়ার মৃত আব্দুস শুক্কুরের পুত্র মো. নবাব মিয়া (৪৮), কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়ার মৃত আব্দুর রহিমের পুত্র নাছিরউদ্দিন রুনা (৪৯), কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনার মৃত আব্দুল মজিদের পুত্র রাশেদুল মজিদ (৪১), একই এলাকার নুরুল ইসলামের পুত্র সিরাজুল ইসলাম (৩৭) ও পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বাহারছড়ার মৃত খায়রুজ্জামান মুন্সির পুত্র মহসিন, প্রকাশ মহসিন শেখ (৪৪)।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, পাহাড় কাটার ফলে আমাদের এলাকার পানি চলাচলের ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকে, যা আমাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। পাহাড় থাকলে আমাদের এলাকার সৌন্দর্য বজায় থাকে। পাহাড় কাটলে বন্যপ্রাণিদের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যায়।
পাহাড় কাটার মামলায় স্থানীয়রা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের এই উদ্যোগ আশা করি, এই মামলার ফলে পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। এছাড়া কক্সবাজারের পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলা পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এ ধরনের আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমেই পরিবেশ ধ্বংসকারীদের হাত থেকে প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষা পাবে বলে আশা করেন অনেকেই।
মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মুসাইব ইবনে রহমান বলেন, পাহাড় কেটে প্লট বাণিজ্যের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, আমরা অবৈধ পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব। পরিবেশ রক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।