ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শ্রীমঙ্গলে পানিফল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে বিক্রেতারা

সালেহ আহমদ (স’লিপক):

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরে ভ্যান গাড়িতে ফেরি করে এবং ফুটপাতে বসে পানিফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকেই। এতেকরে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন বলেও জানান বিক্রেতারা।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমুহনা, কলেজ রোড, স্টেশন রোড, হবিগঞ্জ রোড এবং মৌলভীবাজার রোড ঘুরে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যবসায়ী ভ্যান গাড়িতে ফেরি করে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পানিফল বিক্রি করছেন।

দেশীয় সুস্বাদু এ ফলটি কিনতে ক্রেতাদের তেমন একটা ভীড় বা আগ্রহ এ প্রতিবেদকের চোখে না পড়লেও বিক্রেতারা জানান, তারা দৈনিক ১০০-১৫০ কেজি ফল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে শীতকালীন এই পানিফল বিক্রি করে তারা কোনোরকম সংসার পরিচালনা করতে পারছেন।

স্টেশন রোডে ভ্যান গাড়িতে ফল বিক্রি করতে দেখা যায় শহরের শান্তিবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক নামের এক বিক্রেতাকে। এ ব্যাপারে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, পানিফলটি ঢাকা থেকে ৬০০ কেজি পাইকারি কিনে এনে ৪দিনে সব বিক্রি করে ফেলেছেন। খুচরা প্রতি কেজি ৫০টাকা করে বিক্রি করে তিনি খুব লাভবান হয়েছেন।

হবিগঞ্জ রোডে ভ্যান গাড়ি ঘুরে ঘুরে ৮ ঘন্টায় ১২০ কেজি পানিফল করছেন আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। তার সাথে এবিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমি গত এক সপ্তাহ আগে রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ৫ হাজার কেজি পানিফল পাইকারি কিনে এনে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় ৫টি ভ্যান গাড়ির মাধ্যমে বিক্রি করছি। দৈনিক ৪-৫ বস্তা ফল বিক্রি করতে পারছি। প্রতি কেজি ৫০টাকা দরে প্র্যত্যেক ভ্যানে ১০০-১৬০ কেজি পর্যন্ত দৈনিক বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।

কলেজ রোড, মৌলভীবাজার রোড সহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে ঘুরে পানিফল বিক্রি করছেন শ্রীমঙ্গল শহরতলীর শাহিবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মোঃ সুজন মিয়া। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, এই ফল শ্রীমঙ্গল উপজেলার কোনো কৃষক চাষ করেন না। তাই মানুষ কম চেনে।

ঢাকা, সাতক্ষীর্, খুলনা, বগুড়া থেকে আমি বস্তাচুক্তি করে প্রতি শীত মৌসুমে নিয়ে আসি। শহরে না চিনলেও ক্রেতা আছে। তিনি বলেন, আমি গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রায় এক হাজার কেজি ফল বিক্রি করতে পেরেছি। এতে স্বল্প পুঁজিতে আমি খুব লাভবান হচ্ছি। দৈনিক যা ইনকাম হয় তা দিয়ে ভালো মতো পরিবারে খরচ ও সংসার পরিচালনা করতে পারছি।

ফুটপাতে আপেল, পেয়ারা, কমলা, ড্রাগন, মাল্টার সাথে পানিফল বিক্রেতা দেলওয়ার হোসেন জানান, আমি বিভিন্ন ফলের পাশাপাশি মৌসুম ফলও বিক্রি করি। গত কয়েকদিন আগে পানিফল এনেছি। এই ফলটির চাহিদা আছে। ফল বিক্রি করে আমি সংসার চালাই।

স্টেশন রোডের ভ্যান থেকে পানিফল কিনতে আসা ব্যবসায়ী জুুনাইদ আহমদ জানান, এই ফলটি তার প্রিয়। বাসায় নিয়ে খাওয়ার জন্য তিনি এই ফল কিনেছেন।

হবিগঞ্জ রোডের ভ্যান গাড়ি থেকে পানিফল কিনতে আসা রুমি বেগম জানান, ১০০টাকা দিয়ে দুুই কেজি কিনলাম। আমার ছেলেমেয়েরা এগুলো চেনে না। এই ফল আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাবো।

ফল কিনতে আসা আশিদ্রোন ইউনিয়নের টিকরিয়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, এই ফলটি খেতে খুব মজা। এটি পুরোপুরিভাবে পানীয় ফল। কাঁচা অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। আবার সিদ্ধ করে, রান্না করে কিংবা প্রক্রিয়াজাত করেও খাওয়া যায়। এছাড়া কেউ চাষ করলে কম পুঁজিতে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতো।

শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার বাসান্দা আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, পানিফল আমি চিনলেও আমাদের আগামী প্রজন্ম চিনবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এর আরেক নাম ‘শিংড়া’। এটি বিভিন্ন রঙের হয়, খেতেও সুস্বাদু।

কৃষিবিদরা জানান, পানিফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এর আরেক নাম ‘শিংড়া’। ফলগুলোতে শিংয়ের মতো খাঁজকাটা থাকে বলেই এ রকম নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কোথাও কোথাও একে ‘পানি সিংগাড়া’ নামেও ডাকা হয়। বীজ থেকে পানিফলের গাছ জন্মে। সাধারণত পাকা ফলের বীজ প্রথম দুই বছরের মধ্যেই গজিয়ে যায়। তবে বারো বছর পর্যন্ত পানিফলের বীজ গজানোর ক্ষমতা রাখে। পানিফলের ফুল ক্ষুদ্রাকার ও সাদা রঙের। ফুল উভয়লিঙ্গ। ফলচাষ শুরু হয় জুন-জুলাই মাসে এবং ফল সংগ্রহ শুরু করা হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পানিফল সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যায়।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, শ্রীমঙ্গলের কোন কৃষক পানিফল আবাদ করেন না। এগুলো প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায়। এই দেশীয় ফল চাষ করলে স্বল্প পুঁজিতে স্বাবলম্বি হওয়া যাবে। বিভিন্ন জেলায় এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়। এতে চাষীরা বিভিন্ন জেলায় ফল সরকরাহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, পানিফল পুষ্টিতে ভরপুর। পানি ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ট্রাপা নাটানস আর ইংরেজিতে বলা হয় ওয়াটার চেস্টনাট।