ইকরা তৌহিদ মিম, চট্টগ্রাম
অবশেষে পরিবার খুঁজে পেলেন সৌদিআরব ফেরত মিজানুর রহমান। পাসপোর্টে ঠিকানা চট্টগ্রামের হলেও তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বদরখালীর বাসিন্দা আব্দুল জব্বারের পুত্র।
রোববার রাতে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন সেন্টার থেকে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ব্রাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান ও এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার জান্নাতুল ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন।
মিজানুর রহমানের ভাই রেজাউল করিম ও আরেক আত্মীয় আমির হামজা তাকে নিয়ে রাতেই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার জান্নাতুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটায় বাংলাদেশ বিমানের BG-136 বিমান যোগে সৌদি আরব থেকে ঢাকায় পৌঁছান মিজানুর রহমান। এ সময় তিনি এলোমেলোভাবে ঘুরছিলেন। তিনি স্বজনদের ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। কোথায় যাবেন, বলতে পারছিলেন না। এ ধরনের ঘটনায় পরিবারের সন্ধান পেতে তারা ব্রাকের সহায়তা নেন। মিজানুর রহমানকে তাঁর পরিবারের খোঁজ করার জন্য বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ শনিবার ভোরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কাছে হস্তান্তর করেন।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, শনিবার মিজানুর রহমানকে আশকোনায় ব্র্যাকে আনা হয়। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন। তাঁর বাম পায়ে গভীর ক্ষত। মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন। পাসপোর্টে জরুরি যে নম্বর দেওয় আছে সেই নম্বরে ফোন করে আমরা জেনেছি- সেটি পরিবারের কারো নম্বর নয়। বরং যে দালাল পাসপোর্ট করে দিয়েছিলো তাঁর নম্বর। চট্টগ্রামের পুলিশকে ছবি ও পাসপোর্টের বিস্তারিত জানানো হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছবি ও পাসপোর্ট দিয়ে তাঁর পরিবারের খোঁজ করা হয়। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি।
এক পর্যায়ে দুবাই থেকে ওসমান গনি নামে একজন ফোন দিয়ে জানান মিজানুর রহমান তাদের ভাই।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মিজানুর রহমান ২০০১ সালে সৌদি আরব যাওয়ার পর থেকে আর কখনোই দেশে আসেননি। তিনি সেখানে গাড়ি চালাতেন। তিনি যে দেশে ফিরে এসেছেন সেটি পরিবারের কেউ জানতো না।
মিজানুর রহমানের আত্মীয় আমির হামজা জানান, দীর্ঘ দুই দশক ধরে মিজানের সাথে পরিবারের যোগাযোগ নেই। কখনো দেশে আসেননি। সৌদি আরবে গাড়ি চালাতেন। তাদের বাড়ি চকরিয়া উপজেলার বদরখালি এলাকায়। পুত্রশোকে মিজানের বাবা মারা গেছেন। মা বেঁচে আছেন। তারা ছয় ভাই। পুত্র মিজানকে দেখার জন্য মা অস্থির হয়ে আছেন।
শরিফুল হাসান বলেন, ‘সরকার বিদেশফরেত মানুষের কল্যাণে রেইজ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এজন্য সারাদেশে ৩০টা ওয়েলফেয়ার সেন্টার করা হয়েছে। মিজানুর রহমানের মতো মানুষেরা সেই প্রকল্পে সহায়তা পেতে পারেন। তবে ঠিকানা থাকার পরেও একজন মানুষ ঠিকানাহীন হবেন, এটি ভীষণ বেদনার। প্রবাসীদের যেমন স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা উচিত, তেমনি স্বজনদেরও খোঁজ রাখা উচিত।’