ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ মাসে ২২ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা কক্সবাজারের পৌর মেয়র মাবু’র

শওকত আলম, কক্সবাজার

কক্সবাজার পৌরসভার নালা-নর্দমা, ছরা দখলে রেখে জনভোগান্তি বাড়িয়েছে কিছু জবরদখলবাজ। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলবন্দি হয়ে যায় পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা। পৌরবাসীকে ভোগান্তি হতে রক্ষা করার জন্য ২২ টি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী মাবু।

রোববার (২০ আগস্ট) আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মেয়র এমন ঘোষণা দিয়েছেন।

দুপুরে পৌরসভার সম্মেলনে কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ৬ মাসের ২২টি কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র।

 

পরিকল্পনাগুলো হলো ১. পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তুলতে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহে প্রত্যেক বাসা, আবাসিক ভবন, আবাসিক হোটেল ও রেঁস্তোরায় তিন সাইজের পলিব্যাগ ব্যবহারের ব্যবস্থা করা ২. রাত্রিকালীন ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ ও পরিস্কার করা।
৩. ময়লা-আবর্জনা-বর্জ্য খালী জায়গা, ড্রেন ও যত্রতত্র ফেলা থেকে পৌরবাসীকে বিরত রাখতে নিরুৎসাহিত করা ও বিশেষ জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানো ৪. শহর সার্বক্ষনিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব রাখতে পৌরসভায় কর্মরত সেবকদের (পরিচ্ছন্নতা কর্মী) চাকরীতে বহাল রেখে কনজারভেন্সি শাখাকে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া ৫. কক্সবাজার পৌর এলাকায় বিদ্যমান সকল বড় ও মাঝারি আকারের ছরা, খাল ও নর্দমাগুলো পরিস্কার করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা ৬. অবৈধভাবে দখল করা নালা, ফুটপাত ও পৌরসভার মালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জায়গা-জমি দখলমুক্ত করে পৌরসভার আওতায় নিয়ে আসা ৭. দ্রুত সময়ের মধ্যে কস্তুুরাঘাট জেটি ঘাট খনন করে চলাচল উপযোগী করা ৮. বাহারছড়ার মুরুং ছরা হতে হিন্দু সম্প্র্রদায়ের শশ্মান পর্যন্ত পৌরসভার ছরা-ড্রেনের উপর যে সমস্ত অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তা উচ্ছেদ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া ৯. ঘোনারপাড়া হয়ে বাজারঘাটা থেকে পেশকারপাড়া স্লুইচ গেইট পর্যন্ত এলাকার সকল দখলদারদের উচ্ছেদ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া ১০. টেকপাড়া হয়ে আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্লুইচ গেইট পর্যন্ত এলাকা দখলমুক্ত করা ১১. পাহাড়তলী-রুমালিয়ারছড়া-মাঝেরঘাট পর্যন্ত নালা-নর্দমা থেকে অবৈধ দখলাদার উচ্ছেদ ও খনন করা ১২. শহরের বিভিন্ন অলি-গলির ফুটপাত দখলমুক্ত করার পাশাপাশি প্রকৃত হকারদের স্থায়ী পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা ১৩. অবৈধ সকল টমটমকে কক্সবাজার পৌর এলাকায় কোনোভাবেই প্রবেশ করতে না দেয়া। পাশাপাশি সকল অবৈধ টমটম যাতে পৌর শহরে চলাচল করতে না পারে সেই বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।

 

রোহিঙ্গা এবং ১৮ বছর বয়সের নিচে কাউকে টমটম চালাতে না দেয়া ও নিয়মিত অভিযান চালানো ১৪. অন্য উপজেলার কোন চালক কক্সবাজার পৌরসভায় টমটম চালাতে চাইলে তার মা-বাবা, ভাই-বোনের এনআইডি উপস্থাপন এবং পৌরসভার স্থায়ী একজন বাসিন্দা জিম্মাদার ও পৌরসভা থেকে বিনামূল্যে টমটম চালকের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা ১৫. পৌরসভার ড্রেনগুলো বছরে চারবার টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খনন করা হবে ১৬. পৌরসভার মালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত অবৈধ দখলকৃত জায়গা-জমিগুলো দ্রুত দখলমুক্ত করে পৗরসভায় আয়বর্ধনমূলক বাণিজ্যিক ভবন, মার্কেট, শপিংমল, এপার্টমেন্ট তৈরি করা ১৭. দ্রুত সময়ের মধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো, বিশেষ করে কক্সবাজার সদর মডেল থানা রোড, বঙ্গবন্ধু সড়ক, বড়বাজার সড়ক, পেশকারপাড়া সড়ক, টেকপাড়া মসজিদ সড়কসহ ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক টেকসইভাবে সংস্কার করা ১৮. যারা পৌরসভার অবৈধ নালা-নর্দমা, ছরা ইত্যাদি দখল করে আছে তা দখলমুক্ত করতে সহযোগিতা করলে তাদের বিশেষ সম্মাননা প্রদানসহ শতকরা ২০ থকে ৩০ ভাগ পৌরকর মওকুফ করা ১৯. কক্সবাজার পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবৈধভাবে দখল করে যত্রতত্র বাস, সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ অন্যান্য যানবাহনের অস্থায়ী স্ট্যান্ড (পার্কিং) জনস্বার্থে উচ্ছেদ করা ২০. কক্সবাজার পৌরসভায় সকল প্রকার নাগরিক সেবা দ্রুত প্রাপ্তি ও সহজলভ্য করে হয়রানি ও ভোগান্তি বন্ধ করতে পৌর কার্যালয়ের সকল শাখাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো ২১. সরকারের দুর্নীতির ব্যাপারে গৃহিত জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে কক্সবাজার পৌরসভার সকল কাজে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।

 

পৌর নাগরিকদের অভিযোগ গ্রহণ করে তা সমাধানের জন্য নিয়মিত গণশুনানির আয়োজন এবং কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তড়িৎ তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তুমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ২২. পৌর নাগরিকদের হয়রানি ও ভোগান্তি দূর করতে কাঙ্খিত সকল নাগরিক সেবা ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

 

মেয়র বলেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আমি একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। আমার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমি এ রাজনৈতিক দলের নীতি-আদর্শের প্রতি দৃঢ়ভাবে অবিচল। তবে আমি কক্সবাজার পৌরসভার সকল কার্যক্রম, সকল দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সততা-নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ পৌরসভা হবে সকল দল-মতের মানুষের। এখানে সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে। নতুন পৌর পরিষদের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি পৌরবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪