ই-পেপার | বুধবার , ২৬শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে বাঁচতে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়ছে স্থানীয়রা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা ইতিমধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। আগামী রোববার দুপুরের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ওপর দিয়ে মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এতে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের মানুষজন চরম আতঙ্কে আছেন। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কাঠের ট্রলার ও দ্রুতগতির স্পিডবোটে চড়ে ৩৪ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ সদরে আশ্রয় নিচ্ছেন।

ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার উপকূল থেকে ১ হাজার ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। বেলা তিনটা পর্যন্ত দ্বীপের অবস্থা স্বাভাবিক ছিল জানিয়ে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, তখন পর্যন্ত দ্বীপে ঝড়বৃষ্টি হয়নি। আকাশও পরিষ্কার। সাগরের অবস্থাও শান্ত রয়েছে।

কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে ঘূর্ণিঝড়টি টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আঘাত হানার খবর প্রচার হওয়ায় অনেকের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। আতঙ্ক দূর করতে আজ শুক্রবার বিকেল থেকে দ্বীপের প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান এবং লোকজনের করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। দ্বীপের লোকসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ খান বলেন, আজ সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে দ্বীপের লোকজন টেকনাফে যাওয়া শুরু করেন। বেলা তিনটা নাগাদ পাঁচ শতাধিক মানুষ কয়েকটি কাঠের ট্রলার ও স্পিডবোটে করে টেকনাফে গেছেন। আরও কিছু লোক টেকনাফ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের ধারণা, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ লন্ডভন্ড হতে পারে।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত বছরে অক্টোবরে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের জলোচ্ছ্বাসে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তলিয়ে গিয়েছিল। এ সময় শতাধিক ঘরবাড়ি ও বিপুল নারকেলগাছ উপড়ে পড়েছিল। ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাতের সময়কালে সাগরে পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাব থাকতে পারে। এ সময় জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে সর্বোচ্চ ২০-২৫ ফুট বেশি হতে পারে। তখন ক্ষয়ক্ষতিও বাড়তে পারে। জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর মতো টেকসই বেড়িবাঁধ সেন্ট মার্টিনে নেই।

নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে টেকনাফে যেতে দ্বীপের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে ওঠেন। ছোট নৌযানে গাদাগাদি করে বসে নারী-শিশুরা পাড়ি দেন বঙ্গোপসাগর। আজ শুক্রবার দুপুরে
নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে টেকনাফে যেতে দ্বীপের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে ওঠেন। ছোট নৌযানে গাদাগাদি করে বসে নারী-শিশুরা পাড়ি দেন বঙ্গোপসাগর।  শুক্রবার দুপুরে ছবি

আজ বেলা ১১টার দিকে পরিবারের আট সদস্য নিয়ে সেন্ট মার্টিনের পূর্ব দিকে জেটিঘাটে আসেন গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান। এরপর তিনি কাঠের ট্রলারে উঠে টেকনাফের দিকে রওনা দেন। কারণ জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান (৫৫) বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় তাঁর ঘরে পানি ঢুকেছিল।

এবারের ঘূর্ণিঝড় আরও প্রবল বেগের হতে পারে। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি টেকনাফে পাড়ি জমাচ্ছেন। সেখানে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকবেন। ঘূর্ণিঝড়ের দাপট কেটে গেলে টেকনাফ থেকে বাড়িতে ফিরবেন তিনি।

সেন্ট মার্টিন–টেকনাফ সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দুটি কাঠের ট্রলার ও কয়েকটি স্পিডবোটে করে আড়াই শতাধিক মানুষ সেন্ট মার্টিন ছেড়ে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এরপর আরও মানুষ সেন্ট মার্টিন ছেড়েছেন কি না, তাঁর জানা নেই।

স্থানীয় লোকজন জানান, আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজে দ্বীপের একাধিক মসজিদে ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে জানমাল রক্ষার জন্য বিশেষ মোনাজাত করেন মুসল্লিরা। এরপর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারণা শুরু করেন। সেন্ট মার্টিন বাজারের প্রচারণায় অংশ নেন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

আজ শুক্রবার বেলা তিনটা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু
বেলা তিনটা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু

প্রচারণায় বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা এখন ১ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। কাছাকাছি অবস্থানে চলে এলে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসার জন্য মাইকিং করে জানানো হবে। তখন দ্রুত ঘর ছেড়ে লোকজনকে আশ্রয়শিবিরে যেতে হবে। তখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, শুকনা খাবারও সঙ্গে রাখতে হবে।

ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালে তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। এরপর ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে পৃথক বৈঠক হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ সদস্যরা প্রস্তুত আছেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে তিনটি সাইক্লোন শেল্টারসহ ৩৭টি হোটেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাতে সাত হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। মানুষজনকে সচেতন করতে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে আনা হবে। সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে।