আবদুল হাকিম রানা, পটিয়া
চট্টগ্রামের পটিয়ায় লাগাতসর বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় পূবাঞ্চলের হাইদগাঁও কেলিশহর খরনা ও কচুয়াইয়ের কৃষকদের রোপিত গ্রীস্মকালীন শাক সবজির ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও শতাধিক পানের বরজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে চাষীরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত সপ্তাহে লাগাতার বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির ভান্ডারখ্যাত পটিয়ার হাইদগাঁও, কেলিশহর কচুয়াই খরনাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শাক সবজির ক্ষেত, বিশেষ করে শ্রীমতি উপত্যকায় বরবটি, বেগুন, ঢেঁড়স, বিভিন্ন ধরনের শাক, লাউ, তিতা করলা, মিষ্টি করলা,শসাসহ হরেক রকমের শাক সবজির ক্ষেত সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া পানের বরজ, পেঁপে বাগান ও মৎস্য চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
সবজিচাষী চন্দন চৌধুরী, ইমতিয়াজ, ইদ্রিস, ইউনুচ, আরব মিয়া, পোপন দাশ, খোরশেদ, শফিউর রহমান, পরিমল, ধনঞ্জয়, জামাল, তৈয়ব, আনোয়ার, ইউনুচ, কালাম, নাসির, মুছা, নাজিম,
মোনাফ, ছালেহ আহমদ, জিয়াউল হক, সুমন, জাহেদ, রফিক, মুজিব, মফিজ, অরুণ কান্তি দাশ, জসিম, এমএ আজিজসহ অসংখ্য কৃষক এই সবজি চাষের উপর নির্ভর করে পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বর্তমানে বর্ষণ ও বন্যায় তাদের সব চাষাবাদ পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
পানচাষী উজ্জ্বল চৌধুরী রনজিত চৌধুরী, রতন চৌধুরী, তপন দত্ত, ভোলা চৌধুরী আজাদ, বাসু,
খোকন রায়, সুমন চৌধুরী, তুষার, অধির চৌধুরী, কমল, মাধব, সুব্রতসহ আরো অনেক পানচাষী
তাদের পানের বরজের চালাসহ চারদিকে ভেঙে যাওয়ায় মারত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও মৎসচাষী জসিম, আবুল কালাম, আবুল হোসেন, রাজু হোসেন, নাজিম, ইমতিয়াজ, রাসেলসহ অনেক মৎসচাষীর পুকুর পানিতে ডুবে কোটি টাকার মৎস পোনা ও মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া রোপিত আমন
ধানের চারা ও পঁচে যাওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ কৃষক হাইদগাঁও কৃষক কল্যাণ পেশাজীবি সমবায় সমিতি লি:, ঢাকা ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং মহাজন থেকে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন।বর্তমানে দুর্যোগ নেমে আসায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দুচোখে অন্ধকার দেখছেন।
হাইদগাঁও কৃষক কল্যাণ পেশাজীবি সমিতির সভাপতি ,জয়নাল আবেদীন, পানচাষী নেতা উজ্জ্বল চৌধুরী, কৃষক সংগঠক চন্দন চৌধুরী, পানচাষী তুষার চৌধুরী, সমিতির সদস্য রুবেলসহ নেতৃবৃন্দ চাষীদের চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমি, চাষাবাদস্থল পরিদর্শন ও কৃষকদের সাথে দেখা করে যে কোন পরিস্থিতিতে দূর্যোগ কাটিয়ে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তারা পটিয়ার সবজি ভান্ডারের ক্ষয় ক্ষতি নিরুপন করে কৃষকদেরকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, ইউএনও আতিকুল মামুন, কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
হাইদগাঁও কৃষক কল্যাণ পেশাজীবি সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলেন, আমাদের কৃষক ও মৎসচাষীরা মৌসুমি চাষাবাদের মাধ্যমে পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বর্তমানে হটাৎ বন্যা
তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকু কেড়ে নেওয়ায় তারা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, আমরা ক্ষয়ক্ষতির
প্রকৃত অবস্থা তুলে আনার জন্য কাজ করছি।
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে বলেন, মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন তদন্তের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।