ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাজনগরে ইউপি সদস্য মিটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বানারাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৯ পরিবারের প্রতিবাদ

সালেহ আহমদ (স’লিপক),সিলেট

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ৮নং মনসুরনগর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রলোভনে আব্দুস সামাদ নামক এক ব্যক্তি টাকা নেওয়ার বিষয়ের সাথে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান মিটুর নাম সম্পৃক্ত করার ঘটনায় বানারাই ভূমিহীন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৯টি পরিবার ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

 

রবিবার (১৩ আগষ্ট) বানারাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনে ঘর পাওয়া ১৯টি পরিবারের লোকজন প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।

আশ্রয়ন প্রকল্পের আলী মিয়া, খছরু মিয়া, মুকিদ মিয়া, জহির মিয়া, রুজিনা বেগম, হামিদ মিয়া, পারুল বেগম, সুমন মিয়া, রেনা বেগম, সুমন মিয়া (২), জলিল মিয়া, কনা মিয়া, আব্দুল আহাদ, মারুফ মিয়া, সাজনা বেগম, জসির মিয়া,শরীয়ত আলী, রাসেল মিয়া, রুসনা বেগমসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা আশ্রয়ন প্রকল্পের সামনে দাঁড়িয়ে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।

 

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, দুইবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান মিটু তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভূমিহীন ঘর পাওয়ার জন্য ইউপি সদস্য হিসাবে তার যতটুকু করণীয় তারচেয়েও বেশী সাহায্য, সহযোগিতা করেছেন। তাদের ভূমি ও গৃহ কিছুই ছিল না। তারা অন্যের বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতেন। কেউ আবার কলোনিতে ভাড়াবাসায় থাকতেন। এভাবে খুব মানবেতর জীবনযাপন চলছিল তাদের। মাহবুবুর রহমান মিটুর সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়ে আজ তাদের কষ্ট দূর হয়েছে। তাদের নিকট থেকে ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান এক কাপ চা খেতেও চাননি।

 

মৃত ধনাই মিয়ার পুত্র আলাল মিয়া রাজনগর থানায় অভিযোগে উল্লেখ করেছেন আব্দুস সামাদ মেম্বারকে বলে আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে, এই মর্মে তার নিকট থেকে ৪০ হাজার টাকা নেযন। পরবর্তীতে আলাল মিয়া বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করে ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান মিটু তার নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

 

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা মাহবুবুর রহমান মিটুর উপর ওই আলাল মিয়া মিথ্যা অভিযোগের তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান। আলাল মিয়া অনৈতিকভাবে আব্দুস সামাদকে টাকা দিয়ে সমাজ নষ্ট করেছে এর জন্য আলাল মিয়া ও আব্দুস সামাদ উভয়কে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানান আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা।

 

রাজনগর থানায় আলাল মিয়ার লিখিত অভিযোগে জানা যায়, বানারাই গ্রামের আলাল মিয়া প্রধামন্ত্রীর ভূমিহীনকে দেওয়া ঘর পাওয়ার জন্য আব্দুস সামাদ নামক ব্যক্তিকে ৪০ হাজার টাকা দেন। আব্দুস সামাদ ১নং ওয়াডের ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান মিটুকে দিয়ে ঘর দিবে বলে জানান। পরে বানারাই আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ দেওয়া শেষ হয়ে গেলে আলাল মিয়া টাকার জন্য আব্দুস সামাদকে চাপ দেন। তখন সামাদ তাকে হুমকি ধামকি দেন।

 

এব্যাপারে আলাল মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, দশ হাজার টাকা ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান মিটুর নিয়েছেন। ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে বলে তিশ হাজার টাকা আব্দুস সামাদ নিয়েছেন। রাজনগর থানার মামলায় আলাল মিয়া শুধু আব্দুস সামাদ টাকা নিয়েছে বলে উল্লেথ করেছে।

 

আলাল মিয়ার নিকট অভিযোগের বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আরো একটি অভিযোগ ইউএনও অফিসে দিয়েছি যে, ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান মিটু ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। বাকী ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন আব্দুস সামাদ। তার কোন অভিযোগ সঠিক জানতে চাইলে সঠিক কোন উত্তর করতে পরেননি।

 

এলাকার লিটন মিয়া তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আলাল মিয়া এখানকার বাসিন্দা ছিলেন না। বর্তমানে তিনি ভোটার হয়েছেন। তিনি কারো প্ররোচনায় এতো বড় একটা মিথ্যা অপবাদ ইউপি সদস্য মাহবুবকে দিচ্ছেন। তার বিচার হওয়া উচিৎ।

 

এবিষয়ে মাহবুবুর রহমান মিটু বলেন, আমি আলাল মিয়ার ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। আলাল মিয়াকে আমার নিকট আব্দুস সামাদের বিচার নিয়ে আসেন। আমি তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে অভিযোগ করতে বলি। পরে পুলিশ ঘটনা তদন্তে আসলে আব্দুস সামাদ টাকা নিয়েছে স্বীকার করে টাকা ফেরত দেবে বলে জানান। এরমধ্যে কারও প্ররোচায় তিনি আমাকে জড়িত করে কথাবার্তা বলছেন।

 

মাহবুবুর রহমান আরো বলেন, সরকারী সম্পত্তি রক্ষায় নিজ উদ্যোগে ২০১৬ সালে লংঙ্গু নদী, ছিকার খাড়া প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রভাবশালীদের নিকট থেকে দখলমুক্ত করি। জাউয়া মৌজায় ভূমিহীনদের জন্য ১০টি ঘরের ভূমি, একজন ভূমিহীনের ১০ শতক জমি সরকার প্রদত্ত, আশ্রাকাপন পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল, পদ্মা বিলের সরকারি খাল দখলমুক্ত করতে নিজে উদ্ঢ়োগ নিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রভাবশালীদের হাত থেকে উদ্ধার করি। বানারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩ শতক ভূমি যার মূল্য ৩৩ লাখ টাকা আমরা দান করেছি। নোয়াগাঁও-বানারাই মানুষের চলাচলের জন্য মূল্যবান জমি আমরা দিয়েছি। আশ্রয়ন কেন্দ্রের ১৯টি পরিবার ঘর পেয়েছে। তারা বলতে পারবে আমি কি ধরনের সহযোগিতা করেছি। তারা আমাকে কোন টাকা পয়সা দিয়েছেন কি না। আমি এখন প্রতিহিংসার শিকার।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪