কক্সবাজার অফিস:
কক্সবাজার জেলার টেকনাফকেন্দ্রিক অপহরণ ও মানবপাচারচক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুলসহ চিহ্নিত ৬ অপহরণকারী গ্রেফতার হয়েছে। কক্সবাজারস্থ র্যাব-১৫ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এই চক্রটিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার এই অপহরণচক্রের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় অর্ধডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে।
টেকনাফ থানায় ৫টি, উখিয়া থানায় ১টি এবং ঈদগাঁও থানায় ১টি মোট ৭টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নতুন পল্লানপাড়ার মৃত সিরাজ মেম্বারের পুত্র মুহিত কামাল(৩৪), দক্ষিণ লম্বরী এলাকার হাফেজুর রহমানের পুত্র সাইফুল ইসলাম (৩৮), নতুন পল্লানপাড়ার কাদির হোসেনের পুত্র রোহিঙ্গা হাবিবুল্লাহ লালু (৩০), রামু উপজেলার দাড়িয়ারদিঘি এলাকার মৃত নুরুল হকের পুত্র মোঃ আব্বাস মিয়া জাহাঙ্গীর (৪০), একই উপজেলার থোয়াইংগা কাটার আব্দুল আলমের পুত্র সৈয়দুল আলম (২৪) ও উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের বাসিন্দা আব্দুস সালামের পুত্র তাহের হোসেন (২৫)।
র্যাব জানায়, টেকনাফের একটি অপহরণ চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে এনজিও এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ দেওয়ার কথা বলে নিরীহ লোকদের টেকনাফে নিয়ে জিম্মি করে। পরে মিয়ানমারের বিভিন্ন নাম্বারে রেজিস্ট্রেশন করা ইমু নাম্বার থেকে কল দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের নিকট থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করে আসছিলো।
কক্সবাজারস্থ র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরী বলেন, গত ২৩ জুলাই র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের একটি টিম গোপন সংবাদে জানতে পারে গত ২০ জুলাই তৌহিদ নামের এক যুবক কক্সবাজারের ঈদঁগাও উপজেলার পোকখালি এলাকার হামিদ হোসেন এবং নিজামুদ্দিনকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। পরে মিয়ানমারের মোবাইল সিম ব্যবহার করে ইমু নাম্বার থেকে ফোন করে প্রতিজন থেকে দেড় লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে। উক্ত ঘটনায় ২৩ জুলাই একটি অপহরণ মামলা হয় এবং পুলিশ তৌহিদকে গ্রেফতার করে। তৌহিদের দেওয়া তথ্য মতে র্যাবের আভিযানিক দল মূল চক্রকে গ্রেফতারের কাজ করছে। পরবর্তীতে গত ৭ আগস্ট সকালে র্যাব-১৫ এর একটি দল তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যমে অপহরণ চক্রের চকরিয়া-রামু-ঈদগাঁও এলাকার এজেন্ট সাইদুল আমিন এবং আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী এই চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুল ইসলামসহ আরো ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, ধুত অপহরণকারীরা জানায় কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভিকটিমদের কাজ দেওয়ার কথা বলে টেকনাফে এনে দুর্গম পাহাড়ে গুদামঘরে বন্দি করে রাখে। ভিকটিমের সংখ্যা ২০-২৫ জন হলে তাদেরকে মাছধরা বোটে করে সেন্টমার্টিন এ নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে মায়ানমারের অপহরণ চক্রের সদস্যরা মাছ ধরার বোটে করে তাদের মায়ানমারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মায়ানমারের নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে। স্থানীয় বিকাশ নাম্বারে মুক্তিপন এর টাকা প্রেরণ করা হলে তারা ভিকটিমকে মাছ ধরার বোটে করে আবার টেকনাফে নিয়ে এসে ছেড়ে দেয়।
তিনি আরোও বলেন, টেকনাফ সদর নতুন পল্লান পাড়া, লম্বরি এবং লেংগুর বিল এলাকার প্রত্যেক পরিবার এই অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত। এই অপহরণ চক্রের মূল হোতারা এলাকার লোকদেরকে টাকা দিয়ে প্রশাসনের কোন গাড়ি বা কোন সদস্যকে দেখলে সাথে সাথে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে গ্রুপে জানিয়ে দেয়।
গ্রেফতার অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঈদগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।