ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঠাকুরগাঁওয়ে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ: যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানি!

কবিরুল ইসলাম কবির, ঠাকুরগাঁও:

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ভবনগুলোতে কোমলমতি ২শত শিক্ষার্থীর চলছে পাঠদান। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের প্রাণহানির ঘটনা।

এখানে যেকোনো সময় ভবন ধসে সাভারের রানা প্লাজার মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভবন ধস আতঙ্কে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হারও কমে গেছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন।

 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, এই উপজেলায় ১১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মিনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নারগুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২টি’র ভবন বহু পুরানো এবং খুবই জরাজীর্ণ। তাই এই দুটি বিদ্যালয়ের ভবনগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদ্যালয় দুটিতে কোমলমতি ২শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে।

 

এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেগুলোতেও পাঠদান চলছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে ও স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ওই বিদ্যালয় ভবনগুলো নির্মিত হয়। যথাযথ সংস্কার ও নির্মাণ কাজে কম কস্টের কারণে বিদ্যালয় ভবনগুলো এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

 

সরেজমিনে উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ছাদের বিম, দেয়াল, পিলার ও ছাদে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়েছে ছাদের পলেস্তারা। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে। অথচ এখানো এসব বিদ্যালয় ভবনে চলছে পাঠদান। যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে এসব ভবন।

 

মিনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছাদের বিম, স্তম্ভ ও দেওয়ালে ফাটল, পলেস্তারাঁ (আস্তর) টুকরা ঝরে পড়ছে। দরজা-জানালা মরিচা ধরে ভেঙে গেছে। সামান্য ও অতি বৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ছাদ চুইয়ে শ্রেণীকক্ষে পানি পড়ছে।

 

এছাড়া বৃষ্টি হলে কক্ষের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১শ’১জন। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের করা ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তালিকায় এটিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে নারগুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা বাবলী জানান, বিদ্যালয়টি খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয় ভবনটি সংস্কার করলেও টেকসই হবে না। তাই ভবনটি সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ ছাড়া বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে অভিভাবক রয়েল বলেন, “ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। তাই অনেক সময় তাদের বিদ্যালয়ে যেতে মানা করি। ”

হরিপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদ ইবনে সুলতানের বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীসহ আমরা সরজমিনে তদন্ত পূর্বক ঝুঁকিপূর্ণ এই ২টি বিদ্যালয়সহ মোট ২৫টি বিদ্যালয়ের তালিকা প্রস্তুত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও উপজেলা প্রকৌশল বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবেন।

 

উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম বলেন, আমি নিজে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি বিদ্যালয়ে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। এই ভবন গুলো অনতিবিলম্বে সরিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ না করলে যেকোন মূহুর্তে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪