ই-পেপার | মঙ্গলবার , ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থানে সৌধ উদ্বোধনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনের দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্থানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই স্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্মারক সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।

 

এতে সংবিধানে স্বাক্ষররত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বক্তৃতারত ছবি ম্যুরাল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৬৯ জন আইনজীবীর নামের তালিকাও।

 

শুক্রবার (২৮ জুলাই) এ সৌধ উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। বিশেষ অতিথি থাকবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আরও বক্তব্য রাখবেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

 

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট ইনার গার্ডেনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদন করে স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি জে বি এম হাসান, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আবদুন নুর দুলাল, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী প্রমুখ।

এতে ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর সংবিধানে স্বাক্ষররত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বক্তৃতারত ছবি ম্যুরাল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং সংবিধানের ৯৪ এবং ৯৫ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃতি করা হয়েছে।

স্মারক স্তম্ভে নাম থাকা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৬৯ আইনজীবী হলেন- যশোরের এম মশিউর রহমান, কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, পাবনার মুহাম্মদ আমিন উদ্দিন, ঢাকার আবদুল আহাদ, এ কে এম সিদ্দিক (হেনা মিঞা), খন্দকার আবু তালেব, দীনেশ চন্দ্র রায় মৌলিক, মো. মফিজুর রহমান, সৈয়দ আকবর হোসেন (বকুল মিয়া), দেওয়ান মাহবুব আলী, বাবু লাল মোহন শিকদার, মোহাম্মদ ইছহাক, চট্টগ্রামের রায় সাহেব কামিনী কুমার ঘোষ, আবুল হোসেন, নজমুল হক সরকার, বীরেন্দ্রনাথ সরকার, মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা খান, খুলনার আবদুল জব্বার, এস এম আইয়ুব হোসেন, আবদুর রহিম, সিলেটের মো. আব্দুল হাফিজ, রামরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, বরিশালের জিতেন্দ্রলাল দত্ত, সুধীর কুমার চক্রবর্তী, রংপুরের এ ওয়াই মাহফুজ আলী (জররেজ মিয়া), পূর্ণচন্দ্র সরকার, শিবেন্দ্রনাথ মুখার্জি, বিজয় চন্দ্র মিত্র, নারায়ণগঞ্জের অখিল চন্দ্র দাস, মো. ফজলুল হক, মুন্সিগঞ্জের অনিল চ্যাটার্জী, নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল, মন্মথ মুখার্জি, কেদার রায় চৌধুরী, ফরিদপুরের জিতেন্দ্রনাথ সেন, রাজবাড়ীর কালীশঙ্কর মৈত্র, কক্সবাজারের জ্ঞানেন্দ্রলাল চৌধুরী, বৌধেন্দ্র বিকাশ ভট্টাচার্য, নোয়াখালীর নরেন্দ্রনাথ ভৌমিক, রায় সাহেব নগেন্দ্র কুমার শূর, মনীন্দ্র কুমার সরকার, নরেন্দ্র কুমার নাথ, কুমিল্লার অতীন্দ্রনাথ ভদ্র, কাজী আবদুল মালেক, প্রসন্ন কুমার ভৌমিক, যতীন্দ্র কুমার ভদ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবু শামস জহুরুল আলম, নওগাঁর আবদুল জব্বার, মো. আবু ফারুক চৌধুরী, আবদুল জব্বার, নগেন্দ্রনাথ নন্দী, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার সফিউদ্দিন, যশোরের সুশীল কুমার রায়, সৈয়দ আমীর আলী, আবদুর রশিদ খাঁন, কুষ্টিয়ার আবদুল গণি, ঝিনাইদহের শেখ হাবিবুর রহমান, সাতক্ষীরার কাজী মোহাম্মদ মছরুর আহমেদ (ক্যাপ্টেন কাজী), নড়াইলের মামুনুর রশিদ, ঝালকাঠি মহিউদ্দিন খান, জাহাঙ্গীর হোসেন, পিরোজপুরের রায় বাহাদুর ললিতকুমার বল, সুনামগঞ্জের সুনাহার আলী, দিনাজপুরের সুমঙ্গল কুমার কুণ্ডু, মো. হাবিবুর রহমান, নেত্রকোণার অখিল চন্দ্র দাস, ফজলুল হক ও লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস।

 

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন নিজ দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। পরদিন ১১ জানুয়ারি ‘দি প্রভিশনাল কন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। ওই আদেশের অনুচ্ছেদ ৯-এ উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট থাকবে- যা একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতি যারা সময়ে সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে।

 

ওইদিনই রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাইকোর্ট।

 

রাষ্ট্রপতির ১১৪ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ’ (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) আদেশ দ্বারা রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশের কার্যকারিতা দেওয়া হয় ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আসেন বঙ্গবন্ধু। সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেন প্রাঙ্গণের যেখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানেই নির্মিত হয়েছে এই স্মারক সৌধ।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪