
শাহ মুহাম্মদ রুবেল:
অপহরণ ও মানবপাচারচক্রের জিম্মিদশায় হিমশিম খাচ্ছে দক্ষিণ কক্সবাজারের সাধারণ জনগণ। পাশাপাশি ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারাও চক্রের খপ্পরে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এদের শিকার শুধু পুরুষরা নয়, রেহাই পাচ্ছেন না নারী-শিশুরাও।
বিভিন্ন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে চক্রের কিছু সদস্য আটক হলেও গডফাদাররা সবসময় আড়ালে থেকে যায়।তাতে উখিয়া-টেকনাফ তথা দক্ষিণ কক্সবাজার অপহরণ ও মানবপাচার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। পরিণত হয়েছে আতংকের জনপদে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে টেকনাফ উপকূল দিয়ে সাগর পথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার হতো বেশ দেদারসে ।পাচারের শিকার লোকজন থাইল্যান্ড সীমান্তে বা মালয়েশিয়া পৌঁছালে তাদের মারধর করে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে ছেড়ে দিতেন পাচারকারীরা।
পরবর্তীতে পাচারের শিকার লোকজন অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে সেখানে বিভিন্ন কাজে জড়াতেন।ওই সময়ে থাইল্যান্ডে একটি পাহাড়ে মালয়েশিয়াগামী লোকজনের মৃতদেহ উদ্ধার ও একটি চক্র ধরা পড়ায় এবং সাগর পথে মানবপাচারে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় প্রশাসনের শক্ত অবস্থানে মানবপাচার বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি ও নতুন ভাবে কক্সবাজারে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ পরবর্তীতে ২০২০ সালের দিকে এই রুটে ফের মানবপাচার সক্রিয় হয়ে উঠে। তবে পুরনো এবং নতুন পাচারকারীদের সমন্বয়ে গঠিত মানবপাচারের চক্রটি এখন আগের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশেও সক্রিয় রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে এ চক্রের তিন সদস্য ৮ এপিবিএনের হাতে আটক হলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।
এপিবিএন এর কাছে তারা স্বীকার করেছে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও স্থানীয়দের মিয়ানমার এবং মালয়েশিয়ায় পাচার করে আসছে তারা। প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই চক্রের সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানান তারা।
উখিয়াস্থ ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপস্ এণ্ড মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ জানান, গত ৮ জুলাই উখিয়া ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কেফায়েত উল্লাহ (২৪) ও হামিদ হোসেন (২৫) নামে দুই ব্যক্তিকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে টেকনাফের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় মানবপাচারকারীরা। পরে সেখান থেকে হামিদ হোসেন কৌশলে পালিয়ে আসলেও কেফায়েত উল্লাহকে পাঠিয়ে দেয়া হয় মিয়ানমারস্থ পাচারকারীদের কাছে। সেখানে তাকে আটক করে মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কও দাবি করেন।
বিষয়টি জানার পর এপিবিএন এর একাধিক টীম উখিয়া ও টেকনাফের সম্ভাব্য স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে পাচাকারী চক্রের তিন সদস্য কলিম উল্লাহ, এনাম উল্লাহ ও তারিকুল ইসলাম কে আটক করতে সক্ষম হয়। পরে এই চক্রের হাতে অপহরণ পরবর্তী মিয়ানমারে পাচার হওয়া কেফায়েত উল্লাহকে কৌশলে মিয়ানমার থেকে আনানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। অপরাধ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান আছে। গ্রেপ্তারকৃত কলিম উল্লাহর নামে ইতোপূর্বে হত্যা, অস্ত্র সহ ৪ টি মামলা রয়েছে।