আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সম্প্রতি ভারতে একাধিক ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ট্রেনচালকদের ক্লান্তি, অবসাদ এবং কাজের সময়ে মনঃসংযোগের অভাবসহ বিভিন্ন কারণ সামনে উঠে এসেছে। এ সমস্যা দূর করতে চালকদের সচেতন করার প্রক্রিয়ায় আগেই জোর দেওয়া হয়েছিল। এবার তাদের মন এবং শরীর ভালো রাখতে তাদেরই পরিবারের লোকজনের সাহায্য চাইল দেশটির রেল কর্তৃপক্ষ।
মেট্রোর মোটরম্যান এবং লোকাল ট্রেনচালকেরা কেমন পরিবেশে কাজ করেন, তা নিয়ে তাদের পরিবারকে অবহিত করতে সম্প্রতি দুইটি পৃথক কর্মশালার আয়োজন করেছিল কলকাতা মেট্রো এবং পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশন। গত ৭ জুলাই পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনে এবং ৯ জুলাই কলকাতা মেট্রোর নোয়াপাড়া কারশেডে ও বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
মেট্রো সূত্রে জানা গেছে, এ কর্মশালায় চালকেরা ছাড়াও তাদের স্ত্রীরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তাদের স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের তাদের কাজের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করা হয়। ঠিক কোন ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাত্রিবোঝাই রেক নিয়ে চালকেরা প্রতিদিন মেট্রো চালান, সে সম্পর্কেও সম্যক ধারণা দেওয়া হয় তাদের।
এছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট সিমুলেশন রুমে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করাসহ প্রাসঙ্গিক ভিডিও দেখানো হয় তাদের। পাশাপাশি, চালকদের অভাব-অভিযোগের কথাও জানানো হয় এতে। চালকেরা যাতে বাড়িতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান, সেদিকে লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার দিকেও জোর দেওয়ার কথা বলেন মেট্রোর কর্তারা। কর্মশালায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে চালকদের যোগব্যায়াম করার পরামর্শও দেওয়া হয়। এছাড়া খুব সকালে যেসব মেট্রোচালক কাজে যোগ দেন, তাদের ক্ষেত্রে মোবাইল এবং সামাজিক মাধ্যমে বেশি সময় না কাটানো এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মেট্রোচালকদের স্ত্রীদের এ বিষয়ে ‘সতর্ক দৃষ্টি’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রায় একই কায়দায় চালক এবং তাদের পরিবারকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় শিয়ালদহে রেলের কর্মশালাতে।
এ কর্মশালা কাজের সুস্থ পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে রেল এবং মেট্রোর তরফে দাবি করা হলেও এ নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। রেল এবং মেট্রো, দুইক্ষেত্রেই চালকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। কলকাতা মেট্রোর অবস্থা আরও করুণ। বেশিরভাগ চালকেরা ৮ ঘণ্টা কাজের পরে ১৬ ঘণ্টা বিশ্রাম পান না বলে অভিযোগ করেছে রেলের কর্মী সংগঠনগুলো। সম্প্রতি কাজের মাঝে বিরতির সময়ে ট্রেনচালকেরা যাতে উন্নত পরিবেশ পান, সে জন্য শিয়ালদহে রানিং রুমের ব্যবস্থাপনা ভালো করা হয়েছে। কিন্তু কলকাতা মেট্রোর ক্ষেত্রে ওই ব্যবস্থাপনা তুলনামূলকভাবে অপ্রতুল বলে অভিযোগ এসেছে। পর্যাপ্ত সংখ্যায় মেট্রোচালক না থাকায় অনেককেই বেশি সময় কাজ করতে হয়। ফলে সেই সমস্যার সমাধান ঠিক কিভাবে হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। এছাড়া দেশটির লোকাল ট্রেনে বহু নারী চালকও রয়েছেন। এ কর্মশালায় তাদের সমস্যা কতটা গভীরভাবে অনুধাবনের চেষ্টা হলো সেই প্রশ্নও উঠেছে।