ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ: আদ্যোপান্ত

বিশেষ প্রতিবেদক:

কক্সবাজার জেলার প্রথম ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি তাঁর নানাবাড়ি তৎকালীন ঈদগাঁও (বর্তমান ইসলামাবাদ) ইউনিয়নের পাঁহাশিয়াখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নানা মরহুম ছৈয়দুর রহমান স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মরহুমা জাহানারা বেগম মিজান সাঈদের গর্ভধারিণী মা। বাবা অ্যাডভোকেট সাঈদ রমজানুল আলম কক্সবাজার উপজেলার ভারুয়াখালি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী এবং ভারুয়াখালী দীপশিখা একাডেমি কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা।

এছাড়া তিনি কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কক্সবাজার সিটি কলেজেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

শিক্ষাজীবন :
মিজান সাঈদ তাঁর প্রাইমারি শিক্ষা গ্রহণ করেন ১৯৮০ সালে, ঈদগাঁও পাঁহাশিয়াখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ওইসময় ৩২টি প্রাইমারি স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্রদের সম্মিলিত পরীক্ষায় তিনি প্রথমস্থান অধিকার করেন।

১৯৮১ সালে তিনি কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং একই স্কুল থেকে ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাশ করেন।

উলেখ্য, ১৯৮১ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শেষের দিকে এবং ১৯৮২ সালে ৭ম শ্রেণির প্রথম দিকটায় তিনি ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়েও কিছুদিন অধ্যয়ন করেন।

তিনি ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাশ করেন। একই সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদী এলএলবি অনার্স কোর্সে ভর্তি হন এবং ১৯৯১ সালে তা কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৯২ সালে।

এছাড়াও ১৯৯৪ সালে তিনি হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড এথিকেল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ থেকে হিউম্যান রাইটস এবং লিগ্যাল এইড এর উপর একবছর মেয়াদী ডিপ্লোমা অর্জন করেন।

বাবা-মা’র স্বপ্ন পূরনের জন্যে মিজান সাঈদ ২০০০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পাড়ি জমান লন্ডনে। ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব উলভাৱহাম্পটন থেকে এলএলবি অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিন বছর মেয়াদী কোর্স কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মাত্র দু’বছরে সম্পন্ন করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোর্সে মিজান সাঈদ ২.১ গ্রেড অর্জন করেন। সফলভাবে এলএলবি অনার্স সম্পন্ন করার পর মিজান সাঈদ ইউনিভার্সিটি অব নর্দামব্রিয়া থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা অন বার ভোকেশনাল কোর্স (পিজিডি অন বিভিসি) ডিগ্রি অর্জন করেন। মিজান সাঈদ ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী লিংকনস্ ইনে বার-এট-ল সনদ লাভ করেন।

পেশাগত জীবন :
১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ লাভ করে মিজান সাঈদ ১৯৯৫ সালে ঢাকা বারে অ্যাডভোকেট হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের ল-চেম্বার হক এন্ড কোম্পানী’তে যোগ দেন ও মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে প্র্যাক্টিস শুরু করেন।

আইন পেশায় মিজান সাঈদের প্রকৃত হাতেখড়ি হয় ব্যারিষ্টার রফিকুল হকের হাতে। বর্তমানে তিনি মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একজন তালিকাভূক্ত আইনজীবী ।

ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে বিগত দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের একটি প্রজেক্টে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে দুই বছর (২০০৪ থেকে ২০০৬) রেসিডেন্ট লিগ্যাল এডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় ফরাসী ল ফার্ম – জিড লরেট নুয়েল এবং ভারতীয় ল ফার্ম – ফক্স মন্ডল এর সাথে যৌথ উদ্যোগে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এ তিনটি আইনের উপর বিশেষ পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট একটি সংস্কার রিপোর্ট প্রদান করেন। ওই সময় ব্যারিষ্টার মিজান বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন বিভাগের পূনর্গঠন, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক সমুহকে কোম্পানিতে পরিবর্তন, মানি লন্ডারিং আইন সংশোধন ও সময় সময় বিভিন্ন রেগুলেটরি ইস্যুতে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শক হিসেবে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।

ব্যারিষ্টার মিজান তার ২৮ বছরের পেশাগত জীবনে শতাধিক দেশি-বিদেশি ব্যাংক, বীমা, কোম্পানি/কর্পোরেট হাউজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সাবেক ব্যাংক ইন্দোসুয়েজ (বর্তমানে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি), প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, সাবেক সোশাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (বর্তমানে সোশাল ইসলামি ব্যাংক), জনতা ব্যাংক, বেক্সিমকো গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ট্রান্সকম বেভারেজ লিঃ, ফ্লোরা টেলিকম লিঃ, মীরপুর সিরামিক ওয়ার্কস লিঃ, খাদিম সিরামিক ওয়ার্কস লিঃ, হাইপেরিয়ন বিল্ডারর্স লিঃ, সোনালী জুট মিলস লিঃ, বি. কে. ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিঃ, শাহজালাল গ্রুপ, এসিআই লিঃ, এনা প্রপার্টিজ লিঃ, সেইবোল্ট গ্রুপ, এস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট লিঃ, সিটি জেনারেল ইন্সুরেন্স লিঃ, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স লিঃ, ঢাকা ফোন লিঃ, ফিনিক্স গ্রুপ, এপোলো গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, বৈশাখী মিডিয়া লিঃ, এইচপি ক্যামিক্যালস লিঃ, আকিজ গ্রুপ, নীট এশিয়া লিঃ, ঢাকা ব্যাংক লিঃ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, পাতিমাস ইন্টারন্যাশনাল এসডিএন লিঃ (মালয়েশিয়া), এইচ আর গ্রুপ, এলিগেন্ট গ্রুপ, জিমালটু সিংগাপুর ইত্যাদি।

ব্যারিষ্টার মিজান শিক্ষাগত, পেশাগত কিংবা ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, জাপান, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ফ্রান্স ও বেলজিয়াম সফর করেন। বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের সহযোগী আইনজীবি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার দায়ে ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় প্রধান আইনজীবি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পারিবারিক জীবন :
ব্যারিস্টার মিজান সাঈদের সহধর্মিনী ইফ্ফাত কামাল কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁও-এ অবস্থিত বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ইফফাত কামালের বাবা লেঃ কর্ণেল মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া (অবঃ) ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মিতে চাকুরীকালীন অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্থান নেয়ায় পাকিস্তানের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নির্যাতনের শিকার হন ও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত অন্তরীন থাকেন। ইফফাত কামালের আপন চাচা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা খাজা নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বাংলাদেশের একমাত্র বেসামরিক শহীদ বীরোত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সম্প্রতি মরনোত্তর স্বাধীনতা পদক ২০২৩ এ ভূষিত হয়েছেন । শহীদ বুদ্ধিজীবি সিএসপি অফিসার নূরুল আমিন ইফফাত কামালের আপন খালু এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল হারুন আহমেদ চৌধুরী (সিলেট) বীরোত্তম ইফফাত কামালের আপন মামা। মরহুম বিচারপতি আব্দুস সোবহান চৌধুরী ইফফাত কামালের নানা। ব্যারিস্টার মিজান এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক ।

রাজনৈতিক কর্মকান্ড:
ছাত্র জীবনে ব্যারিস্টার মিজান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ. রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। এ সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ও সমর্থক হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহন করেন। আইন পেশা শুরু করার পর আওয়ামী আইনজীবি পরিষদের কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হন এবং বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবি পরিষদের ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

২০২২ এবং ২০২৩ সালে পরপর দুইবার তিনি সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন নির্বাচন -এ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডঃ
একাডেমিক ব্যুৎপত্তি অর্জনের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে মিজান সাঈদ বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন এবং কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: