ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঈদের দ্বিতীয় দিনও চামড়া আসছে পোস্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদন:

ঢাকা: ঈদের দ্বিতীয় দিনও বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া আসছে লালবাগের পোস্তায়। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কোরবানি হওয়া পশুর চামড়া দুপুর থেকেই পোস্তায় আসছে।

বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করে লালবাগের পোস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দুপুরের পর থেকে চামড়া কেনা শুরু করেছেন, যা চলবে আগামী এক মাস। তবে পোস্তায় ফড়িয়া কমলেও কয়েকগুণ বেড়েছে মাদ্রাসার লোকজনের আনা-গোনা।

 

শুক্রবার (৩০ জুন) দুপুরে লালবাগের পোস্তায় গিয়ে দেখা যায়, দুপুর থেকেই ঈদের দ্বিতীয় দিন কোরবানি হওয়া পশুর চামড়া মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসছেন। আর আড়তদারদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠেছে লালবাগের শায়েস্তা খান, রাজ নারায়ণ ধর রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন রোড। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন। তবে এ বছর ঈদের দ্বিতীয় দিন অনেক পশু কোরবানি হয়েছে তাই চামড়াও অনেক আসছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এখানে চামড়া সংগ্রহের পর প্রথমে লবণজাত করা হবে। পরে তারা সাভারের ট্যানারিগুলোতে পাঠিয়ে দেবেন।

 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান সিএনএন বাংলা২৪কে বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিনও ঢাকা শহর ও এর আশপাশে কিছু পশু কোরবানি হয়। সে চামড়াটাও আজকে দুপুর থেকে আসতে শুরু করেছে। শুক্রবারও দুপুর থেকেই পোস্তার ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করেছেন।বিকেলের দিকে কেনা-বেচা জমে উঠেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া যত তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে আনবেন তত ভালো। আমরা আগেও বলেছি চামড়া কেনার সময় যেন ভেবে-চিন্তে কেনে। চামড়ার মান বুঝে আমরা দাম দেব।

 

এ বিষয়ে কামাল অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. কামাল সিএনএন বাংলা২৪কে বলেন,আজকে যেসব গরু কোরবানি হয়েছে সেগুলোর চামড়া আসতে শুরু করেছে। এ বছর যে হারে চামড়া আসছে তা দেখে মনে হচ্ছে ঈদের দ্বিতীয় দিন অনেক পশু কোরবানি হয়েছে, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। এ বছর চামড়ার দাম ভালো। সঠিক সময়ে চামড়া নিয়ে এলে আমরা চামড়া ফেরত দেই না। গতকাল পোস্তায় কোনো চামড়া ফেরত বা ফেলে দেওয়া হয়নি। ফড়িয়ারাও দাম পেয়েছে।

 

মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. আব্দুল রশিদ ভ্যানে করে ১৫টি চামড়া এনেছেন। জানতে চাইলে তিনি সিএনএন বাংলা২৪কে বলেন, একেবারে ছোট চামড়ার দাম ৪৫০, মাঝারি চামড়ার দাম ৭৫০ ও ৮৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দাম দিয়েছে। এবার দাম ভালো পেয়েছি। কিন্তু আমরা এখন আর চামড়া কিনতে পারি না মাদ্রাসার ছেলেদের জন্য। মাদ্রাসার ছেলেরা দুদিন আগেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া চেয়ে আসে। মানুষও মাদ্রাসায় চামড়া দান করে দেয়।

 

প্রসঙ্গত, গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সারাদেশে কম দামে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। এমনকি ঢাকা শহরেও চামড়ার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি।

 

এদিকে ২০১৩ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সারাদেশে খাসির চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। অন্যদিকে গতবছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা ও বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

 

এ বছর কোরবানির পশুর লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে ৩ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। ঢাকার বাইরের চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর খাসি ও বরকির চামড়ায় দাম গতবারের মতোই রাখা হয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খাসি-বরকির চামড়ার দাম গত বছরের দামই রাখা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, এ বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা যদি ইচ্ছা করে দাম কমানোর জন্য গেম খেলে তাহলে আমরা চামড়া বিদেশে রপ্তানির অনুমতি দেব। চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা চাই না সেটা হোক। এ বছরও আমাদের ঘোষণাটি হলো কারসাজির মাধ্যমে দাম কম নেওয়া, দেওয়া বা চামড়া না নেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেব।

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া ও ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসেবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এ চামড়ার ৬০ শতাংশের বেশি সরবরাহ মেলে কোরবানির মৌসুমে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের ও ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: