ই-পেপার | শনিবার , ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

র‍্যাবের সোর্স পরিচয়ে চাঁদাবাজি, প্রতারক মনসুর আলম মুন্না গ্রেপ্তার

কক্সবাজার অফিস :

কখনো সাংবাদিক, কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি, প্রতারণা, মাদক ও পতিতা ব্যবসাসহ বহু অপকর্মের হুতা মনসুর আলম মুন্না (২৮) কে অবশেষে র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে।

 

সর্বশেষ গেল ৩ এপ্রিল র‍্যাবের সোর্স পরিচয়ে ক্রসফায়ার থেকে বাঁচানোর কথা বলে একলাখ টাকা চাঁদা আদায় ও আরও একলাখ টাকা নেওয়া জন্য হুমকির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১৫।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিহ্নিত প্রতারক ও চাঁদাবাজ মনসুর আলম মুন্না র‍্যাবের মিথ্যা সোর্স পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীকে কথিত ক্রসফায়ার ও মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার নিকট থেকে নগদ ১ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে। পরে আরও ১ লক্ষ টাকা চাঁদার দাবিতে ক্রমাগত ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলো সে। এই ঘটনায় চাঁদাবাজ মনসুর আলম মুন্না (৩০) কে কক্সবাজার পৌরসভার লালদিঘির পাড় এলাকার সোনালী ব্যাংকের পাশের গলি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

র‍্যাব জানায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের পশ্চিম লারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম
গত ২ এপ্রিল র‌্যাব-১৫ এর নিকট অভিযোগ দায়ের করেন যে, জমি-জমা সংক্রান্তে দীর্ঘদিন যাবত তার চাচাতো ভাই সেলিমের সঙ্গে বিরোধের জেরে ওই বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অভিযোগ ও কক্সবাজারের আদালতে মামলা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে মনসুর আলম মুন্না অবগত ছিলো। এই সুযোগে তার সাথে কক্সবাজার র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ‘গভীর সখ্যতা ও সুসম্পর্ক’ রয়েছে বলে জানিয়ে চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে জমি-জমা সংক্রান্তে দায়েরকৃত মামলায় র‌্যাবকে দিয়ে গ্রেফতারসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি, ক্রসফায়ার ও ভয়ভীতি দেখায়।

 

অভিযোগকারী নুরুল ইসলাম একপর্যায়ে মনসুর আলম মুন্নার প্রলোভন ও পীড়াপীড়িতে এক লক্ষ টাকা দিতে রাজি হন। ফলে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর নগদ ৪০ হাজার টাকা ও চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ৬০ হাজার টাকা মুন্নার হাতে তুলে দেন। পরবর্তীতে প্রতারক ও চাঁদাবাজ মুন্না গত ১৬ মার্চ নুরুল ইসলামের নিকট আবারও এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।

 

এমতাবস্থায় ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন- পূর্বে প্রদত্ত এক লক্ষ টাকা উক্ত মনসুর আলম মুন্না কোন র‌্যাব সদস্য কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে না দিয়ে সে নিজেই আত্মসাৎ করেছে। সে নিজেকে সাংবাদিকসহ র‌্যাব এবং বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয় দিয়ে চাঁদা আদায় করেছে।

 

র‌্যাব আরও জানায়, প্রতারক ও চাঁদাবাজ মনসুর আলম মুন্না নিজেকে ‘দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ’ নামে একটি পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার দাবি করে। তাকে চাঁদাবাজি, পতিতাবৃত্তি ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন অপকর্মে ইতোপূর্বে পুলিশ ও র‌্যাব একাধিকবার গ্রেপ্তার করে।

জানা গেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ এপ্রিল বিকেল ৪ টার সময় কক্সবাজারস্থ র‌্যাব-১৫, সিপিএসসি ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজার শহরের লালদিঘির পাড় এলাকার সোনালী ব্যাংকের পাশের গলি থেকে চাঁদাবাজ ও প্রতারক মনসুর আলম মুন্নাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

 

গ্রেফতার মুন্না কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়বিল গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে। সে কক্সবাজার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব ঘোনারপাড়ার সেলিম ড্রাইভারের বাড়িতে ভাড়া থেকে নিজেকে সাংবাদিকসহ র‌্যাব ও বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয় দিয়ে চাঁদা আদায় ও মাদক ব্যবসা করে আসছে।

 

র‌্যাব-১৫ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনসুর আলম মুন্না স্বীকার করে যে, সে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেকে সাংবাদিকসহ র‌্যাব ও বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয় দিয়ে আসছিলো। এ সকল পরিচয় দিয়ে সে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করেছে। সে বিভিন্ন ভুক্তভোগী লোকজনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দিতো এবং তার চাহিদা মোতাবেক চাঁদা প্রদানে বাধ্য করতো।

 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানিয়েছেন, র‌্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার হওয়া মনসুর আলম মুন্নাকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে ৪ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

 

পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারক ও চিহ্নিত চাঁদাবাজ মনসুর আলম মুন্না ইতোপূর্বেও প্রতারণা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে র‌্যাব ও পুলিশের হাতে আটক হয়ে একাধিক বার জেল খেটেছে।

 

এই মনসুর আলম মুন্নার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানার এফআইমার নং- ৫০/৭৬০, তারিখ- ৩০ ডিসেম্বর, ২০১১) ধারা- ৮(২)/৮(৩) ২০১২, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও কক্সবাজার সদর থানার এফআইআর নং-১৩, জি আর নং-২৪৫ ও কক্সবাজার সদর থানা জিআর-২৪৭/২০২০ মামলা রয়েছে।