এম, শহীদুল ইসলাম, কুতুবদিয়া :
কক্সবাজারের সাগরবেষ্ঠিত দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার সমুদ্রসৈকতে কয়েক দিন ধরে ভেসে আসছে মৃত জেলিফিস।
সামুদ্রিক এই প্রাণীর আধিক্যের ফলে সাগরে জেলেরা জাল দিয়ে মৎস্য শিকার করতে পারছেন না। জেলেদের জালে মাছের পরিবর্তে আটকে পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে জেলিফিস। মাছের পরিবর্তে জেলিফিস ধরা পড়ায় ক্ষতির হুমকিতে জেলেরা।
রোববার (১৭ মার্চ) বিকেল পাঁচটার দিকে কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ সমুদ্র-সৈকতে সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের বালিয়াড়িতে অসংখ্য মৃত জেলিফিস পড়ে আছে।
মৃত জেলিফিসগুলো বক্স আকারে সাইজে এক দেড় ফুটের সমান।জানা যায়, জেলিফিস সাগরের বিষাক্ত একটি সামুদ্রিক প্রাণী। এটি মূলত গ্রীষ্মকালে খরা নোনা পানি থেকে সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের ভাষায় এটিকে “নুইন্ন্যা” বলে। সাগরে জেলিফিসের আধিক্যের ফলে মাছের প্রজনন কমে যায়। বিষাক্ত এ প্রাণীর সংস্পের্শ জেলেদের চুলকানিসহ শরীরে ফোস্কা পড়ে এবং জেলেদের জালেরও ক্ষতি হয়। জেলিফিসের উপদ্রবের ফলে সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছে না সাগর নির্ভরশীল দ্বীপের কুতুবদিয়ার বেশির ভাগ জেলে। তবে, বৃষ্টি হলে বা সাগরে মিষ্টি পানি বৃদ্ধি পেলে এটি কমে আসতে পারে ধারণা করছেন স্থানীয় জেলেরা।
এবিষয়ে মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি মাহমুদ উল্লাহ বলেন, তারা মাছ না পেয়ে সাগর থেকে খালি হাতে ফিরেছে। খরা নোনা পানি থেকে সৃষ্ট জেলিফিস বা ‘নুইন্ন্যার’ প্রাদূর্ভাবের কারণে জালে এই জেলিফিস আটকে পড়েছে। মাছের পরিবর্তে জেলিফিস ধরা পড়ায় উপকূলের জেলেরা মৎস্য শিকার না করে কূলে ফিরছে সবাই। প্রতি বছর এ সময়ে বিষাক্ত সামুদ্রিক এ প্রজাতির উদ্ভব হয়। নিজেদের জাল নিরাপদে রাখতে সাগর থেকে জাল তুলে এনেছে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক জাতীয় সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার আহবায়ক এম, শহীদুল ইসলাম বলেন, গভীর সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলে কম লবণাক্ততার জায়গায় জেলেফিস উপকূলে চলে আসতেই আটকে পড়ে বালুতে। তখন মরে যায়। কাছিমের খাদ্য জেলিফিস সাগরের কাছিমের পরিমান কমে গেলে জেলিফিসের বিস্তৃতি ঘটে বেশী। বিষাক্ত এ জেলিফিস সামুদ্রিক মাছের জম। সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকা এসব জেলিফিসের সংস্পর্শে গেলে চুলকানিসহ নানা সমস্যা হতে পারে। উপকূলে সারি সারি জেলিফিসের মৃত্যু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের একটি। তবে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াডিতে মৃত্য জেলিফিস পড়ে থাকা সত্যি উদ্বেকজনক।
কুতুবদিয়া উপজেলার মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব বলেন, সাগরে বিষাক্ত ধরনের জেলিফিসের পরিমান বেড়ে গেছে। যা মানুষের শরীরের সংস্পর্শে আসলে এমন অস্বস্তি হতে পারে। এ জেলিফিসের প্রধান খাদ্য মাছ ও মাছের ডিম। মাছ ও ডিম খেয়ে ফেলার কারনে সাগরের মাছ কমে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সামুদ্রিক প্রাণী কচ্ছপ কমে যাওয়া ও সামুদ্রিক দূষনের ফলে বিশ্বজুড়ে সাগরে জেলিফিসের বিস্তার বাড়ছে। এটি কিভাবে দূর করতে হবে এবিষয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।