সালাহউদ্দিন কাদের:
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলি ও হালিশহর) আসনে আগামী ৩০ জুলাই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই মাসের শুরুতেই জানা যাবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর নাম।
তবে ঘনিয়ে আসা সময়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দলের হেভিওয়েট ও ত্যাগী নেতারা। সর্বশেষ বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী প্রার্থী মনোনয়নে চমক দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
তাই আগেভাগে সুনিশ্চিত করে কারও নাম শোনা না গেলেও শেষ সময়ে আলোচনা রয়েছেন বেশ কয়েকজন।
তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ সময়ে দলের প্রয়োজনে মাঠে-ঘাটে চষে বেড়ানো সবচেয়ে সক্রিয় আওয়ামী নেতা তিনি। দিনের শুরু থেকে ঘুমানোর আগ অবধি নগর আওয়ামী লীগ ও দলের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন এই নেতা। আলোচনায় শীর্ষে থাকলেও সরাসরি দলের হাই কমান্ডের নির্দেশনা ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন না আ জ ম নাছির উদ্দীন। এমনটা নিশ্চিত করেছেন তাঁর ঘনিষ্টজনরা।
হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, বিএনপির মনোনয়নে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়া এম মনজুর আলম, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
তবে তরুণদের মধ্যে প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে রয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, প্রয়াত ডা. আফছারুল আমীনের ভাই মো. এরশাদুল আমীন ও ছেলে ফয়সাল আমীন।
অন্যদিকে ত্যাগী ও ভালো অবস্থানের হিসাবে এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক।
মুক্তিযুদ্ধে অনেক বাড়িই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি বা আশ্রয়স্থল হিসেবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে সেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত কোনো বাড়ি পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য খ্যাতি অর্জন করেনি। তবে মুক্তিযুদ্ধ থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যুদ্ধে ত্যাগ ও খ্যাতি দুটোই রয়েছে আগ্রাবাদের ‘সৈয়দবাড়ি’র। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় ১৯৭৬ সালে সামরিক জান্তা সরকারের হাতে তাঁর পিতা সৈয়দ আবু সিদ্দিক, ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবদুল গণি, সৈয়দ মোহাম্মদ জাকায়িরাসহ গ্রেফতার হন সৈয়দ মাহমুদুল হক। চট্টগ্রাম ও ঢাকা ক্যান্টনম্যান্টে অমানবিক নির্যাতন এবং ৪ বছর কারাভোগের পর ১৯৮০ সালে মুক্তি পান। স্কুল ছাত্রলীগ, ওয়ার্ড থেকে নগর ছাত্র-যুব রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়ানো সৈয়দ পরিবারের সৈয়দ মাহমুদুল হকের ভাগ্যে দীর্ঘদিন উল্লেখযোগ্য কোনো মূল্যায়ন জুটেনি। তাই তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ও কর্মীরা এবার আশায় বুক বেঁধেছেন বলে জানা গেছে।
তবে এ দৌঁড়ে আরও একজন রয়েছেন। তিনি হলেন, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে নগর হয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী উপদেষ্টা সফর আলী। এ সময়ের প্রবীণ হলেও দল ও নেত্রীর প্রশ্নে মাথায় টুপি আর ঢিলেঢালা পাঞ্জাবী পরিহিত সফর আলীর সরব উপস্থিতি যেন নিত্য ঘটনা। চমক হলে দলীয় হাই কমান্ডের চোখ সফর আলীতে আটকে যেতে পারে বলে ধারণা নগর আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টদের। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন এমএ আজিজ। তাঁর পুত্র নগর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহারও বেশ আলোচনায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে আ জ ম নাছির উদ্দীন, এম মনজুর আলম ও খোরশেদ আলম সুজন কোনও মন্তব্য না করলেও দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে ডা. আফছারুল আমীনের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মো. এরশাদুল আমীন বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। ওয়ার্ড, থানা, ওমরগণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও নগর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে করোনা, রমজান, ঘূর্ণিঝড় মোখাসহ সাধারণ মানুষের পাশে নানা সংকটে ১৯৯১ সাল থেকে কাজ করছি। আফছার ভাইয়ের সঙ্গে থেকে উন্নয়নের কাজে আমি সহযোগিতা করেছি। আমি চাইবো, আমার পরিবারের কাউকে যেনো মনোনয়ন দেওয়া হয়। যোগ্য মনে করলে আমাকে দেবেন, না হয় অন্য কাউকে দেবেন। তবে আমি প্রার্থী হতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করব।
দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, স্কুলজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সঙ্গে জড়িত আছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সাধারণ মানুষের নানা সংকটে কাজ করছি। দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত কাজ করছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন চাওয়া হয়েছিল। নেত্রী যোগ্য মনে করলে আমাকে দেবেন, না হয় অন্য কাউকে দেবেন। যাকে মনোনয়ন দিবেন তার সঙ্গে আমি কাজ করব।
মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী উপদেষ্টা সফর আলী বলেন, আমি আওয়ামী লীগের পরিক্ষিত সৈনিক। দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতি সঙ্গে জড়িত। চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাওয়া হবে। নেত্রী ত্যাগীদের মূল্যায়ন করেন। যোগ্য মনে করলে আমাকে দেবেন। তিনি যাকে মনোনয়ন দিবেন তার সঙ্গে আমি কাজ করব।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসন। ১৯৯১ সালের পর বিএনপির প্রার্থীরা তিনবার এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন। গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা. আফছারুল আমীন এই আসনে টানা তিনবার বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় আগামী ৩০ জুলাই এ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৪ জুলাই, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৬ জুলাই, আপিল দায়ের করা যাবে ৭ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত, আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১১ জুলাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ জুলাই এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৩ জুলাই। সব কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে ইভিএম ব্যবহার করে। ভোটকেন্দ্রে স্থাপন করা হবে সিসিটিভি ক্যামেরা।
এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: