নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল বুধবার ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের কারণে সূচকটি দ্রুত কমেছে। এদিকে প্রধান সূচকটি ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।
বাজার-বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত কিছুদিন ধরে শেয়ার বাজারে মন্দ কোম্পানির দাপট চলছে। শুধু তাই নয়, অনেক বন্ধ কোম্পানির দরও লাগামহীনভাবে বেড়েছে। সেসব কোম্পানির দর কমতে শুরু করেছে। এছাড়া, এখন অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারেরও দরপতন ঘটছে। ফলে দ্রুত সূচক কমছে। বাজারের এ পরিস্থিতিতে ফোর্সড সেল না করার আহ্বান জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। সে সঙ্গে গুজবে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি সপ্তাহের চার কার্যদিবসেই সূচক কমেছে। এছাড়া, গত চার সপ্তাহ ধরেই টানা সূচকের পতনে লেনদেন হচ্ছে। গত মঙ্গলবার এক দিনেই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১.৫১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৬.৮৭ পয়েন্টে অবস্থান করে। ফলে গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত ছিলেন। কখন সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে।
দেখা যায়, লেনদেন শুরুর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। লেনদেন শেষে প্রধান সূচকটি ৩২.৭৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। এর আগে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ডিএসইএক্স সূচক ৫৯৮০ পয়েন্টে নেমেছিল। তার আগে ২০২১ সালের ৭ জুন ডিএসইএক্স সূচক ৫৯৭৫ পয়েন্টে নেমেছিল। অর্থাত্ দুই বছর ৯ মাস আগে অবস্থানে ফিরে এসেছে ডিএসইএক্স সূচক।
সর্বশেষ সূচকের পতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই থেকে শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তথা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ব্যবস্থা আরোপের ফলে পরবর্তী সময়ে শেয়ার বাজারে স্থবিরতা নেমে আসতে শুরু করে। লেনদেন কমে যায়। একপর্যায়ে অধিকাংশ শেয়ারের দাম কমে ফ্লোর প্রাইসে আটকে যায়। এতে বাজারসংশ্লিষ্টরা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার দাবি করে। এ অবস্থায় বাজারে গতি ফেরাতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয় বিএসইসি।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর বাজারে সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়লেও এখন আবার বাজার উলটো দিকে চলছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজারের নিচে নেমে আসার পাশাপাশি লেনদেনও কমছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৪৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত সোমবার এই বাজারে লেনদেন হয়েছিল ৭৫৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাত্ ধারাবাহিকভাবে লেনদেন কমছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ধারাবাহিকভাবে কেন এ দরপতন এ ব্যপারে আমি এখনই কিছু বলছে পারছি না। তবে একুটু বলব—বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে—এমন মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, সুদের হার বেড়েছে। আবার তারল্যসংকট চলছে। এসবের প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে বাজার ৬ হাজার সূচকের নিচে নেমে এসেছে, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিনিয়োগকারীদের বলব, বাজারের দিকে না তাকিয়ে ফান্ডামেন্টালি স্ট্রং কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে।