
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ জনবলের কোনো সংকট নেই। তারপরও বেসরকারি উদ্যোক্তারা দক্ষ জনবল নিয়োগে বিনিয়োগ করছে না। কম বেতনে অদক্ষ জনবল নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার কারণে রোগীরা প্রচুর টাকা খরচ করেও সুচিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারিতে জনবল নিয়োগের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। ফলে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়ম বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শাস্তির বিধান কঠোর করে আইন প্রণয়ন করতে হবে। ৫/১০ হাজার টাকা জরিমানা করে অনিয়ম বন্ধ করা যাবে না। সীমিত জরিমানা তারা আমলে নিচ্ছে না।
বেসরকারিতে বেশি লাভের জন্য দক্ষ জনবলের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। চট্টগ্রামে গত কয়েক দিনে প্রায় ৫০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানকে সংশোধনের সময় দেওয়া হয়েছে এবং কিছু প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিছু প্রতিষ্ঠানকে ৫/১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে। কিন্তু কঠোর আইন না থাকায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে অপরাধ থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা। ১৯৮২ সালে প্রণীত অডিন্যান্সটি যুগপোযোগী করা হচ্ছে না। প্রচুর টাকা খরচ করেও রোগীরা পাচ্ছে না সঠিক চিকিৎসা ও নির্ভুল রোগ নিরূপণ। অদক্ষ, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীত জনবল নিয়ে চলছে রোগী নিরূপণ। নেই চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানের নিয়োগপত্র, মানা হচ্ছে না বেতন কাঠামো। বর্তমানে শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রামে ও উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল, মেটার্রিটি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ল্যাবে ছেয়ে গেছে। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেই চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করে দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এতে রোগীরা ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছে। বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র তদারকি করা স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত কাজ। এসব বিষয় তদারকি করার জন্য সরকারিভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কমিটি রয়েছে। তারা প্রয়োজনে পুলিশ, র্যাব ও জেলা প্রশাসন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তা নিতে পারেন। কিন্তু দেখা যায় সারা বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়, বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও উপজেলা সদর হাসপাতালের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কোনো তদারকি থাকে না। মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হলে কিছু অভিযান পরিচালিত হয়। এসব অভিযানে উঠে আসে বেসরকারিতে স্বাস্থ্য খাতে চরম অনিয়ম।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ৫০০-এর মতো লাইসেন্সধারী বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। তার বাইরে শতাধিক আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে। কিন্তু লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে তারা বসে নেই। চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছে। শহরের অলিগলি ছাড়িয়ে এখন গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছেয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশে স্বাস্থ্য খাতে প্রচুর জনবল তৈরি হয়েছে। হাজারো শিক্ষিত জনবল চাকরি না পেয়ে বেকার রয়েছে। অভিযানে দেখা গেছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের মালিকরা বেশি বেতন দিয়ে দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে চায় না। একজন ডাক্তারকে ২০ হাজার টাকা, নার্সকে ১০ হাজার টাকার বেশি বেতন দেয়া হয় না। কম বেতনে অদক্ষ লোককে নিয়োজিত করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে হাত দিলেই নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য হাসপাতাল বন্ধ করা নয়। আমরা কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ জনবলের সংকট নেই। দক্ষ জনবল নিয়োগে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার কমিশনে রিপোর্ট সরবরাহের কাজ করে থাকেন। রিপোর্ট তৈরির নিজস্ব জনবল ও সরঞ্জাম নেই।’ চট্টগ্রামে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সরকারি হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের অসংখ্য মেডিক্যাল উপকরণ রয়েছে। তার মধ্যে রেডিওলজিক্যাল মেশিনের মধ্যে রয়েছে সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ক্যানসারের কোবাল্ড মেশিন, এক্স-রে, মেমোথেরাপি, এনজিওগ্রাম, আলট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, ইটিটিসহ নানা ধরনের রোগ নির্ণয়ের মেশিন। কোনো মেশিন প্রতিদিন আবার কোনো মেশিন সপ্তাহে, মাসে, ছয় মাসে বছরে পরীক্ষা করে সঠিকভাবে রিডিং দিচ্ছেন কিনা দক্ষ লোক দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। কিন্তু এসব চিকিত্সা সরঞ্জাম যথানিয়মে পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।