ময়মনসিংহ: ব্যুরো:
ময়মনসিংহ: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আঙুলের ছাপ না মিলায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে ভোট দিতে পারছেন না অনেক বয়স্ক ভোটার। এতে পুরুষের চেয়ে ভুক্তভোগী নারীদের সংখ্যা বেশি।
এ নিয়ে নগরের অনেক ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (৯ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে নগরের ৩১ নম্বর মহাখালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন থানারঘাট এলাকার বাসিন্দা বকুলি (৬৫) নামে এক বয়স্ক নারী। কিন্তু ইভিএমে এই ভোটারের হাতের আঙুলের ছাপ না মিলার কারণে তিনি ভোট দিতে পারেননি।
বকুলি সিএনএনবাংলা২৪কে বলেন, আমি তিনবার গেছি কিন্তু আঙুলের ছাপ মিলছে না।
একই অবস্থা থানারঘাট এলাকার মোছা. শাহিদা বেগম (৭০), ছুফিয়া বেগম (৬১) ও জমেলা খাতুনসহ (৪৫) এই কেন্দ্রের আরও অনেক নারী ভোটারের। তারাও এই সমস্যার কারণে ভোট দিতে পারছেন না।
জানতে চাইলে ৩১ নম্বর মহাখালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মৃণাল কান্তি রায় সিএনএনবাংলা২৪কে বলেন, কিছু নারীর গৃহস্থলী কাজ করা এবং বার্ধক্যের কারণে তাদের আঙুলের ছাপে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও হাত ধুয়ে বা ভেসলিন ব্যবহার করে ভোট করার চেষ্টা করছি। শেষ পর্যন্ত না হলে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ভোটার তথ্য যাচাই করে ভোট নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও জানান, এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ১৫৬০ জন। এর মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১৬ ভোট কাস্ট হয়েছে।
একই অবস্থা নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নওমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে আঙুলের ছাপ না মিলায় ভোট দিতে না পেরে অনেক ভোটারকে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
এই কেন্দ্রের ভোটার ও মসিকের ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রোকসানা শিরিন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আমার বাবা-মাসহ অনেক বয়স্ক ভোটারের ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মিলার কারণে ভোট দিতে পারছেন না। সেই সঙ্গে সার্ভারের সমস্যা হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।
নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাগডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রেও একই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানেও অনেক ভোটার ভোট দিতে না পেরে বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসিকের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, বয়স্কদের আঙুলের রেখা মুছে যাওয়ার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে একাধিকবার চেষ্টার পর অনেকের ভোট হয়েছে। তারপরও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বয়স্ক ভোটারদের ভোট নিশ্চিতের চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের এই দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। তারা হলেন- ঘড়ি প্রতীক নিয়ে মসিকের সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু, ঘোড়া প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, হাতি প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাদেকুল হক খান মিল্কি (টজু), হরিণ প্রতীকে কৃষকলীগ নেতা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙল প্রতীকে মো. শহীদুল ইসলাম (স্বপন মণ্ডল)।
সূত্রমতে, এই নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যার মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩২ পুরুষ, ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৫ নারী ভোটার রয়েছে। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৯ জন। এতে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছে ৬৯ জন। তবে নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলর পদে মোট ৩২টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।