ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা প্রমাণের মাপকাঠি

অ্যাডভোকেট মোবারক হোসাইন সাঈদ :

কোনো নাগরিক বিজ্ঞ আদালতে মামলা বা থানায় এজাহার দায়ের করলে বিষয়বস্তু সাক্ষ্য দ্বারা আদালতে প্রমাণ করতে হয়। পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না পেলে মামলাটি আদালত কর্তৃক খারিজ করে দেয়। কাজেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে শুধুমাত্র আদালতের শরণাপন্ন হওয়াই যথেষ্ট নয়, ন্যায় বিচার প্রত্যাশীকে যথাযথ সাক্ষ্যও আদালতে পেশ করতে হয়। আদালত গুণাগুণ ও সত্যতা আছে মনে করলে মামলা গ্রহণ করেন নতুবা তদন্তে প্রেরণা বা ২০৩ ধারায় খারিজ করে দেয়।

 

প্রকৃতপক্ষে, দেওয়ানি মামলা প্রমাণের মানদন্ড বা ভিক্তি হলো: Balance Of Probabilities মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমেই দেওয়ানি মামলার রায় প্রদান করা হয়। পক্ষান্তরে, ফৌজদারি মামলা Beyond reasonable Doubt (সন্দেহতাতীত ভাবে) প্রমা করতে হবে।

তবে প্রমাণের মানদন্ড বা ‘দায়’ কার কতটুকু ? এটি সাক্ষ্য আইনের বিধি-বিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ১০১ ধারা অনুযায়ী, মামলা প্রমাণ করার দায়িত্ব সর্বদা বাদীপক্ষের ওপর থাকবে। এর মানে হলো, যিনি আদালতকে কোনো বিষয়ের সত্যতা আছে বলে বিশ্বাস করাতে চান, তিনিই তা প্রমাণ করবেন। সুতরাং বিবাদী/আসামির প্রতি উত্থাপিত অভিযোগ বাদীকেই প্রমাণ করতে হবে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, মামলা চলাকালে অভিযুক্ত ব্যক্তির নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না।

 

আইনে বলা আছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ (innocent) বলে গণ্য হবেন। ইহা Presumption of innocent বলে খ্যাত। তাই মামলার শুরুতে আসামি বা অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই। মামলা প্রতিষ্ঠা করার সম্পূর্ণ দায়ভার বাদীপক্ষের ওপর বর্তায়। তবে বাদী যদি মামলা প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হন, তখন বাদীর দেওয়া তথ্য-প্রমাণ খণ্ডনের জন্য বিবাদীকে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে হবে।

 

সাক্ষ্য আইনের ১০২ ধারার বিধান অনুযায়ী, মামলা যখন এমন পর্যায়ে থাকে যে কোনো পক্ষ সাক্ষ্য উপস্থাপন না করলে সেই পক্ষ পরাজিত হবে, তখন যে পক্ষের পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাকে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে হবে।সাক্ষ্য আইনের ১০৩ ধারার সারকথা হলো: ফৌজদারি মামলায় বাদী প্রমাণ দাখিল করা সত্ত্বেও আসামি যদি প্রতিষ্ঠা করতে চান যে অপরাধ সংঘটনের সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না; বরং অন্য কোথাও ছিলেন, তখন তাঁকেই সেটা প্রমাণ করতে হবে।

 

উক্তরুপ বিষয়কে আইনের ভাষায় Plea of Alibi (অন্যত্রে) বলা হয়। তা না হলে মামলা বাদীর পক্ষে চলে যাবে। এভাবেই প্রমাণ দাখিলের ভার এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষে পরিবর্তন হয়। সুতরাং, মামলা প্রমাণের দায়ভার প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু বাদীর এবং তা অপরিবর্তনীয়। কিন্তু প্রমাণ দাখিলের দায়িত্ব মামলার অবস্থাভেদে পরিবর্তন হয়ে থাকে।

মামলার শুরুতে বাদীকে মামলা প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে হয়; অর্থাৎ মামলা প্রমাণের দায়ভার বাদীর ওপর বর্তায়। বাদী সেটা করতে সক্ষম হলে বিবাদীকে তা খণ্ডন করে নিজেকে নির্দোষ (innocent) প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্য প্রমাণ দেখাতে হয়।ক্রান্তিকথা, বাদিকেই বাদির মামলা প্রমাণ করতে হয়, বাদি যদি সাক্ষ্য প্রমাণে সক্ষম হয় সেক্ষেত্রে বিবাদীকে তদ ডিফেন্স বা বক্তব্য জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে করতে হবে।

লেখক: মোবারক হোসাইন সাঈদ, আইনজীবী- জেলা ও দায়রা জজ আদালত, কক্সবাজার।