ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শ্রীমঙ্গলে বেসরকারি সংস্থা পাতাকুঁড়ি সোসাইটির বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখলের অভিযোগ

সালেহ আহমদ (স’লিপক):

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পাতাকুঁড়ি সোসাইটি নামক একটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে অন্যের কোটি টাকার জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানা এবং শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে অভিযোগ করেও সমাধান পাচ্ছেন না ভূক্তভোগী ভূমি মালিক।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকার বেগুনবাড়িতে অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি ভূক্তভোগী ভূমি মালিকের দাগের ১৯০ শতক জায়গা কিনে চা বাগান করেছে পাতাকুঁড়ি সোসাইটি।

 

সেই সুযোগে একই দাগের অভিযোগকারী মালিকের জায়গা সংলগ্ন অন্য আরো এক মালিকের জায়গা সহ আনুমানিক প্রায় দেড় থেকে দুই শ শতক জায়গার সীমানা অতিক্রম করে চা গাছ লাগিয়ে দখলের অপচেষ্টা করছে বেসরকারি সংস্থাটি।

 

শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর একটি পর্যটন আকর্ষণ এলাকা। সেখানে গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট সহ অসংখ্য হোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট গঁড়ে উঠেছে। যার ফলে এখানকার জমির মূল্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। ফলে সেই জায়গায় চোখ পড়েছে বেসরকারি সংস্থা পাতাকুঁড়ি সোসাইটির। যেখানে সংস্থাটি নিজের কিছু জমি কিনে অন্য মানুষের জায়গা দখলের চেষ্টা করছে।

 

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানা ও শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে অভিযোগ করেছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসিন্দা জায়গার মালিক মোঃ মুশফিক আহমদ সাদিক। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার পিতা মরহুম মোজাম্মিল আলী খরিদাসূত্রে এবং এসএ পরচা মূলে এই জমির মালিক। আমার পিতা মারা যাওয়ায় আমি ও আমার ভাইদের নামে নামজারি করা হয়েছে। আমরা নিয়মিত খাজনা ও ইউনিয়ন ট্যাক্স দিয়ে আসছি। আমার চাচাতো ভাইয়ের আরো জমি রয়েছে। আমরা আম, কাঠাঁল, লেবু গাছ লাগিয়ে জায়গা ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনের সময় ভূমিখেকো পাতাকুঁড়ি সোসাইটির এম ডি সুব্রত দাস তাদের লোকবল দিয়ে আমাদের জায়গার আম-কাঁঠাল সহ অন্যান্য ফলজ গাছ কেঁটে অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টা করে। তখন আমরা তাদেরকে বাঁধা দেই। কিন্তু তারা সেটা অমান্য করে বারবার জোরপূর্বক আমাদের জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

কিছুদিন আগে আমরা আমাদের জায়গায় কাজ করিয়ে সাইনবোর্ড লাগালে তাদের লোকজন সেটা ভেঙে ফেলে এবং তাদের লোকজন আমার দিকে দা নিয়ে তেড়ে আসে। তখন আমি প্রাণভয়ে সরে আসি। তারা অনেক প্রভাবশালী ও অনেক টাকার মালিক হওয়ায় তাদের পিছনে অনেক প্রভাবশালী লোকজন সহযোগীতা করছে। তাদের ভয়ে আমি আমার বাগানে যেতে ভয় পাচ্ছি। তারা জায়গাটি জোরদখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শ্রীমঙ্গল থানা ও সদর ইউনিয়ন গ্রাম আদালতে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে কাজ করতে নিষেধ করে গেছে। কিন্তু তারা পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও কাজ করার অপচেষ্টা করছে।

 

মোঃ মুশফিক আহমদ সাদিকের চাচাতো ভাই শাহাবুদ্দিন আহমদ বলেন, বেগুনবাড়িতে আমাদের পরচার জায়গায় হঠাৎ করে চা গাছ লাগিয়ে দখলের চেষ্টা করছে পাতাকুঁড়ি সোসাইটি। এই জায়গার কাগজ আমাদের পক্ষে আয়নার মতো পরিস্কার। কিন্তু তারা এই জায়গাটিও দখলের চেষ্টা করছে। আমরা আইনগত এবং সামাজিকভাবে এই অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের সাথে পারছিনা।

 

চা গাছ লাগিয়ে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে পাতাকুঁড়ি সোসাইটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত দাশ বলেন, খলিল মিয়া নামক জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে উল্লেখিত ভূমি সংলগ্ন আরো জায়গা কিনেছি। বিরোধপূর্ণ ওই জায়গাটি খলিল মিয়ার কাছ থেকে পরে রেজিস্ট্রারি করে দিবেন বলায় ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে আমরা দখল ক্রয় করেছি। এ ব্যাপারে মোঃ মুশফিক আহমদ সাদিক বলেন, ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে জায়গা ক্রয় অবৈধ এবং হাস্যকর।

 

শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুদু মিয়া বলেন, এই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েকবার শালিস বসেছিল। তবে, কি সিদ্ধান্ত হয়েছিল মনে করতে পারছিনা। মেম্বার লিটন দাশের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানাবো।

 

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য লিটন দাশ বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকবার মিমাংসা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুইপক্ষ অনড় থাকায় সমাধান করতে পারিনি। খলিল মিয়া ও সাদিক ভাইদের স্বত্ব সংক্রান্ত বিষয় মামলাধিন। সাদিক মিয়ার দীর্ঘদিন জমির কোন খোঁজ খবর না নেওয়ায় খলিল মিয়া জমি বিক্রি করে দেন পাতাকুঁড়ি সোসাইটির এমডি সুব্রত দাসের নিকট। কিন্তু সুব্রত দাসের মালিকানার আইনতঃ কোন কাগজ নাই। পাতাকুঁড়িকে অনেকবার নিষেধ করেও কাজ থামাতে পারিনি।