ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কলেজছাত্রীকে নিয়ে ভারতে প্রমোদভ্রমণ করা সেই ইউএনওর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বিশেষ প্রতিবেদক :

কলেজছাত্রীকে নিয়ে ভারতে ১২দিন কাটানো টাঙ্গাইলের বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

 

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট অদালতের বিচারক মো. মাহমুদুল মোহসীন এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ জুন ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী বাদী হয়ে দঃবিঃ ৪৯৩, ৪৯৪ ও ৪৯৬ ধারায় ওই সাবেক ইউএনওর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদলত এ মামলায় পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরে পুলিশ ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে ৩৯৩ ধারা প্রমানিত হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

 

এর পূর্বে গত মাসের ১৭ তারিখ তিনি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এ সময়ও তিনি অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

 

এরপূর্বে, ওই কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি লিখিত অভিযোগে বলেন, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও মো. মনজুর হোসেনের সঙ্গে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। বিয়ের কথা বলে ইউএনও তার সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পারিবারিকভাবে তার (ছাত্রীর) বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক হলে, তিনি (ছাত্রী) বিয়ের জন্য ইউএনওকে বলতে থাকেন।

 

ইউএনও বিয়ের কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেন এবং টাঙ্গাইল শহরের পাওয়ার হাউসের কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় তারা দুই মাস থাকেন। এ ছাড়াও, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে বেনাপোল হয়ে তাকে (ছাত্রীকে) নিয়ে ইউএনও ভারতের কলকাতায় যান। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে হায়দরাবাদে যান। সেখানে তারা দুজন চিকিৎসা নেন। পাসপোর্ট দেখে তিনি জানতে পারেন মনজুর হোসেন বিবাহিত। সেখানে থাকার সময় তার মুঠোফোন থেকে দুজনের ভিডিও ও কথোপকথন মুছে ফেলেন ইউএনও। ভারতে ১২ দিন অবস্থানের পর ৫ অক্টোবর তারা দেশে ফিরে আসেন। তারপর থেকে ইউএনও তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন।

 

অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রনালয় বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে জেলা প্রশাসন গত বছরের ৭ এপ্রিল ওই কলেজছাত্রী, সাবেক ইউএনও মো. মনজুর হোসেন, তার গাড়িচালক বুলবুল মোল্লাসহ ছয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করেন।

 

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, আদালতে এ মামলার বাদীর সাক্ষী গ্রহণ করেছেন। ওই সময় বিবাদী মনজুর হোসেন আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

 

উল্লেখ্য, ভুক্তোভুগী কলেজ ছাত্রী ২০২২ সালের ২১ জুন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট টাঙ্গাইল সদর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন। এর পূর্বে ২০২১ সালের নভেম্বরে ইউএনও মো. মনজুর হোসেনকে বাসাইল থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়।

 

সর্বশেষ তিনি নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কলেজছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর মন্ত্রিপরিষদের তদন্তে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।