ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির উদ্যোগ যথেষ্ট নয়

সিএনএন বাংলা২৪ রিপোর্ট

চলমান মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি ভূমিকা রাখবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিনিময় হার এখনো স্থিতিশীল নয়। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যে সুযোগ বাংলাদেশের সামনে ছিল, তা অনেকটা সীমিত হয়ে এসেছে।

গতকাল বুধবার দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত মুদ্রানীতি (জানুয়ারি-জুন ২০২৪) বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির হারের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটাও হয়তো অর্জিত হবে না। আমাদের রপ্তানি যেভাবে বৃদ্ধির কথা ছিল, সেভাবে বাড়েনি। ফলে এটা বলা যায়, আমরা অর্থনীতিকে ঠিক যে ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, সেখানে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা খুব ভালো হয়নি। অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে আমদানি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে তদারকি বাড়াতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মন্ত্রী পর্যায় থেকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা হয়েছে। আবার এটাও হতে পারে, তারা এগুলোর অংশ হিসেবে এটা করেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে আগেও গেছে, কিন্তু বর্তমান সমস্যা অন্য প্রজন্মের সমস্যা। এটা ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। মুদ্রানীতির সঙ্গে রাজস্বনীতির সমন্বয়ের জন্য রাজনৈতিক অর্থনীতি ঠিক করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বর্তমান মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি আগের মুদ্রানীতিতে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার কোনটা বাস্তবায়িত হয়নি, সেটা নিয়েও আলোচনা করতে হবে। জাতীয় সংসদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সদস্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করেন না, মুদ্রানীতি কতটুকু বাস্তবায়িত হলো বা এনবিআর তার লক্ষ্য কেন পূরণে ব্যর্থ হলো। জাতীয় সংসদ আইন তৈরির জায়গা হলেও অর্থনীতি নিয়ে সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা আসছে না।

 

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকার (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, অর্থের সরবরাহ কমানো হচ্ছে, কিন্তু ব্যয় কমছে না। ব্যয় বেড়েই চলেছে, তাহলে শিল্প খাত চলবে কীভাবে। জ্বালানি থেকে ভর্তুকি কমানো হবে বলে জানানো হচ্ছে, অথচ আমরা ভর্তুকিতে অভ্যস্ত। খেলাপি ঋণের কথা অনেকে বলেছেন, যদিও এটাই অনেক সমস্যার কারণ। এই সমস্যার সমাধান কোনোভাবেই হচ্ছে না। আরেকটা বড় সমস্যা হলো ভোগ্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেটের শক্তিশালী অবস্থান। এটা ভাঙা না গেলে নিত্যপণ্যের দাম কমবে না। বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বাজারে চার ধরনের বিনিময় হার দেখা যাচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানি ভালো হলেও সেভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে না।

তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিলেও খেলাপি ঋণ কমছে না। যেভাবেই হোক, এটা কমাতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, সুশাসনের অভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির ব্যবহার দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

আইসিএবির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, এই সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপাচ্ছে। তবে এভাবে টাকা ছাপিয়ে যদি উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হয়, তাহলে সেটা খারাপ চোখে দেখার সুযোগ নেই। যদি অনুত্পাদনশীল খাতে ব্যয় হয় তাহলে সমস্যা, অর্থনীতির জন্য তা অনেক বড় ক্ষতির কারণ।