সালেহ আহমদ (স’লিপক):
ষোলোতে উত্তীর্ণ হওয়া আমেরিকান সংস্কৃতিতে জীবনে কিছু বাড়তি দায়দায়িত্ব অর্পণ করে। কিছুটা নতুন অধিকার দেয় এবং আত্মনির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। তাই পরিবারগুলো সন্তানের জীবনের এই বিশেষ অধ্যায়টিকে সাধ্যমতো উদযাপন করে।
প্রবাসী বাঙালি পরিবারগুলোতে কিছুদিন আগেও আমেরিকান সংস্কৃতির সুইট সিক্সটিন (ষোলোতে জন্মদিন উদযাপন), ভ্যালেন্টাইন ডে, থ্যাংক্সগিভিং, হাই স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রম ইত্যাদি পালন হতো না। এখন দিন বদলেছে, মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গীও পাল্টেছে। তাই অধিকসংখ্যক পরিবার আমেরিকাকে নিজের আবাসভূমি বলে ভাবছেন। অনেকে দেশের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে আমেরিকায় বিলাসবহুল স্থায়ী ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। আমেরিকান সংস্কৃতিকে নিজের সংস্কৃতি ভাবতে অভ্যস্ত হচ্ছেন। ফলে একটি ‘বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট কালচার’ বিবর্তিত হতে হতে একটি ‘বাংলাদেশি ডায়াস্পোরা কালচার’ তৈরি হচ্ছে।
আমেরিকান রাষ্ট্র-সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্টকে গ্রহণ-বর্জন করে। পাশাপাশি জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সংস্কৃতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো বজায় রেখে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গঁড়ে উঠছে এই বৃহত্তর ‘বাংলাদেশি ডায়াস্পোরা’। নানান সংস্কৃতির মানুষ সহ সমাজের সকল মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও বিকাশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডায়াস্পোরা সমাজ বিকাশের একটি আবশ্যিক অন্তর্বর্তী পর্যায়। দুঃখজনক ভাবে, কিছু নির্দিষ্ট মহল এই ডায়াস্পোরা কম্যুনিটির ধারণার বিপরীতে জাতি ও ধর্মের দোহাই তুলে। ভীনদেশে থেকেও শুধুই স্বদেশের ও স্বধর্মের বৈশিষ্ট্যকে আঁকড়ে থেকে অকারণে নতুন প্রজন্মের স্বাভাবিক বিকাশের ধারাকে ব্যাহত করছেন।
প্রিয়া পাল। তার জন্মশহর মৌলভীবাজার। নেপাল পালের মেয়ে। মৌলভীবাজার পৌর শহরের ব্যবসায়ী নিত্যানন্দ পালের নাতিন। শহরের সেন্ট্রাল রোডের যেখান থেকে কাশীনাথ রোডের শুরু, সেখানেই ছিলো নিত্যানন্দ পালের দোকান। বসতিও ছিলো একই এলাকায়।
আমেরিকা প্রবাসী প্রিয়া পাল বলেন, একপাশে মনু নদী আর অপরপাশে বর্শিজোড়া পাহাড় নিয়ে স্মৃতির শহর মৌলভীবাজারে আমরা সবাই সকল ধর্মবর্ণ সমাজ নির্বিশেষে জড়াজড়ি করে ছিলাম। প্রবাসে এসেও আমরা তেমনটি আছি, থাকতে চাই!
আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনেরাও চায় প্রিয়দর্শিনী প্রিয়া পালের অনাগত দিনগুলো সাফল্য-সম্ভারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক। পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব সচেতন প্রকৃত মানবিক মানুষ হয়ে উঠুক প্রিয়া পাল।
উল্লেখ্য, যখন কোনও জাতি বা জনগোষ্ঠী তাদের স্বদেশভূমি থেকে বিশ্বের অন্যত্র বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই ব্যাপারটিকে বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন (ইংরেজি: Diaspora) বলা হয়। সাধারণত বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন পরিভাষাটি দ্বারা কোন জনগোষ্ঠীর তাদের স্বভূমি থেকে অনৈচ্ছিকভাবে ছড়িয়ে পড়াকে বোঝানো হয়।
সম্প্রতি অনেকেই ‘ডায়াস্পোরা’ শব্দটিকে খুব ব্যবহার করছেন বুঝে না-বুঝে এবং অনেকেই ভুল বুঝে। ডাযাস্পোরা সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া এবং জাতিসূত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ডায়াস্পোরা কম্যুনিটির ভূমিকার কথা বিশেষভাবে দৃষ্টিগোচর করতেই এ রচনা।