ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করলো পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বেলুচিস্তান প্রদেশে ইরানের বিমান হামলা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে ইসলামাবাদে নিযুক্ত তেহরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে তেহরান থেকে নিজ রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বুধবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘‘ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। এ ছাড়া পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত, যিনি বর্তমানে তেহরান সফর করছেন তিনি আপাতত আর ফিরে নাও আসতে পারেন।’’

তেহরান আকাশসীমার অপ্রীতিকর লঙ্ঘন করায় দুই দেশের মাঝে চলমান অথবা পরিকল্পিত উচ্চ-পর্যায়ের সব ধরনের সফরও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুমতাজ জাহরা বালোচ। এর আগে, মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটিতে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ইরানের চালানো এই হামলায় পাকিস্তানে অন্তত দুই শিশু নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছেন।

এই হামলা নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের মাঝে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। হামলার পরপরই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের তীব্র প্রতিবাদ এবং এই ঘটনা ‘‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’’ বলে হুঁশিয়ারি দেয়।

বেলুচিস্তানের কোন এলাকায় ইরান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু না জানালেও ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, বেলুচিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া পাঞ্জগুর শহরে হামলা চালিয়েছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)।

ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, ইরানের হামলার কেন্দ্রস্থল ছিল বেলুচিস্তানের কোহ-সাবজ (সবুজ পর্বত) নামে পরিচিত একটি অঞ্চল। পাকিস্তানের ‘‘জইশ আল-ধুলম (জইশ আল-আদল) জঙ্গি গোষ্ঠীর দুটি প্রধান ঘাঁটি’’ বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার মাধ্যমে ঘাঁটি দুটি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।

বেলুচিস্তানের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এই ধরনের হামলার তথ্য পেয়েছে। তবে তাদের কাছে এই হামলার বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য নেই। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র বেলুচিস্তানের একটি মসজিদে আঘাত হেনেছে। এতে মসজিদটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেলুচিস্তানে হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনের ফাঁকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে ওই হামলার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা নূর নিউজ বলছে, হামলায় পাকিস্তানের জইশ আল-আদলের প্রধান কার্যালয় ধ্বংস হয়েছে।

ইসলামাবাদে সংবাদ সম্মেলনে মুমতাজ জাহরা বালোচ বলেছেন, গত রাতে ইরানের হামলার ঘটনাটি ‘‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের অপ্রীতিকর এবং স্পষ্ট লঙ্ঘন’’, যা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদের উদ্দেশ্য এবং নীতিরও পরিষ্কার লঙ্ঘন। এই বেআইনি হামলা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং এর কোনও যৌক্তিকতা নেই।

তিনি বলেন, “পাকিস্তান এই বেআইনি কাজের জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে এবং এর পরিণতির দায়ভার ইরানের ওপরই বর্তাবে।’’

সূত্র: ডন, এএফপি, জিও নিউজ।