ইশরাক রাইয়ান:সিএনএন বাংলা২৪:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন চট্টগ্রামের মেয়ে সারজানা আক্তার লিমানা। তিনি সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন।
সারজানা আক্তার লিমানা নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত এবং মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মোট ১২০ নম্বরের পরীক্ষায় পেয়েছেন ৮৪.৭৫ নম্বর। লিমানা’র ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারজানা আক্তার লিমানা সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই মা হারা। তাঁর পিতার নাম জহুরুল আলম। ছোটবেলা থেকে লিমানা’র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নিজের চেষ্টা, পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এই শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
লিমানা কোচিং করেছেন প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশন পরিবার থেকে পরিচালিত কোচিং সেন্টারে। ফাউন্ডেশনটি এই বছর সীতাকুণ্ডের অস্বচ্ছল ও মেধাবী প্রায় আড়াইশ’ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে কোচিং করিয়েছেন।
সারজানা আক্তার লিমানা সীতাকুণ্ড পৌরসভার দক্ষিণ মহাদেবপুর এলাকার চৌধুরীপাড়ার এক অতি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। পিতা জহুরুল আলম পেশায় একজন কৃষক। ছোটবেলায় মারা যান মা রুমা আক্তার। তিন ভাই-বোনের মধ্যে লিমানা বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অদম্য মেধাবী ছিলেন।
লিমানার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে সীতাকুণ্ড বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০২২ সালে সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। এছাড়া শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেছেন লিমানা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগ থেকে দ্বিতীয়, ঢাবির ‘গ’ ইউনিটে ৬১০ তম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ইউনিট থেকে ৭৮তম হয়েছেন অনন্য মেধাবী এই কৃতি ছাত্রী।
লিমানা জানান, তাঁর এই সাফল্যের পেছনে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত ছিল। রুটিনমাফিক তিনি প্রতিটি বিষয়ের ওপর মনোযোগী ছিলেন। এছাড়া ছিল মৃত মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা।
লিমানা বলেন, মারা যাওয়ার আগে তাঁর মা বলেছিলেন আমার মেয়ে পড়াশোনা করবে। প্রয়োজনে আমার রক্ত বিক্রি করে হলেও পড়াশোনা করাবো। হয়তো মাকে বেশিদিন পাইনি। কিন্তু মায়ের এই কথাটা আমার কাছে ছিল চ্যালেঞ্জ। সেখান থেকে আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। পড়াশোনা করেছি। এরপর থেকে ক্লাস ফাইভ থেকে সবগুলো পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া এটা আরেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল। বাবা কৃষি কাজ করতেন। প্রাইভেট পড়া সম্ভব হতো না।
লিমানার পিতা জহুরুল আলম বলেন, মেয়ের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। আমাদের মেয়ে যাতে মানুষের মত মানুষ হয়ে জনগণের সেবা করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: