নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা :
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর কবে শুনানি হবে, তা জানা যেতে পারে আজ রোববার।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানির দিন ঠিক করতে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ দিন ধার্য রয়েছে।
এ সংক্রান্ত রুল শুনানির দিন ধার্য করার জন্য ফখরুলের আবেদনটি আজ কার্যতালিকায় আসবে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এ সিদ্ধান্ত দেন।
ফখরুলের জামিন প্রশ্নে গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) এক সপ্তাহের রুল দিয়েছিল একই বেঞ্চ। কিন্তু শুনানির জন্য ফাইল তৈরি না থাকায় এদিন মামলাটি কার্যতালিকায় আনা সম্ভব হয়নি বলে ফখরুলের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন আদালতকে জানান। শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারক আজ রোববার বিষয়টি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রাখতে বলেন।
ঢাকা মহানগর হাকিম ও মহানগর দায়রা আদালতে ফখরুলের জামিন আবেদন নাকচ হওয়ায় হাই কোর্টে এসেছিলেন তার আইনজীবীরা। জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।
সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরো ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে।
দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। সেদিন রাতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ফখরুলকে আদালতে তোলা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সেদিন মহাসমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা, লোহার রড, ইট পাটকেল ও ককটেলসহ বিভিন্ন মারাত্মক অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে ‘বেআইনি সমাবেশ ঘটিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান’ দেয় এবং মিছিল করতে থাকে। ওই সময় তারা বৈশাখী পরিবহনের বাসসহ একাধিক বাস, পিকআপ ভাঙচুর করে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষতি করে।
মিছিলকারীরা বিএনপির ‘শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে’ রাস্তায় জনসাধারণ ও যানবাহনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, জনমনে আতঙ্ক, ত্রাস সৃষ্টি করে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেয় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুলিশ সদস্যদের আহত করে। তারা প্রধানবিচারপতির সরকারি বাসভবনের পূর্ব পাশের গেইট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। নামফলকসহ ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
২৯ অক্টোবর ঢাকার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন জামিন নাকচ করে ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে জজ আদালতে যান ফখরুলের আইনজীবীরা। কিন্তু ২২ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদেরও জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এরপর জামিন চেয়ে ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। আবেদনের শুনানি নিয়ে ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। ওই মামলায় মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
বিষয়টি গত ১৪;ডিসেম্বর আদালতে তুলে ধরেন মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন। শুনানির দিন ধার্যের আরজি জানিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, নোটিশ জারি হয়েছে। রুল প্রস্তুত হয়েছে। আদালত বলেন, উল্লিখিত হিসাবে বিষয়টি আজ রোববার (১৭ ডিসেম্বর) কার্যতালিকায় আসবে। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বি এম আবদুর রাফেল।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বি এম আবদুর রাফেল জাগোনিউজকে বলেন, ‘রুল শুনানির জন্য প্রস্তুত ও শুনানি করতে চান উল্লেখ করে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী বিষয়টি উপস্থাপন করেন। উল্লিখিত হিসাবে আবেদনটি আজ রোববার(১৭ ডিসেম্বর) কার্যতালিকায় আসবে। কবে এই রুলের ওপর শুনানি হবে, সেদিনটি নির্ধারণ করবেন আদালত।’
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরদিন গত ২৯ অক্টোবর এ ঘটনায় রমনা মডেল থানায় মামলাটি করা হয়। এই মামলায় ২৯ অক্টোবরই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়।