লাইফস্টাইল ডেস্ক :
শীত মৌসুম এলেই ত্বকের সঙ্গে সঙ্গে চুলেও নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় চুলে খুশকির সমস্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও এটিকে পুরোপুরি তাড়ানো যায় না। খুশকির যন্ত্রণা এড়াতে অনেকেই নানা রকমের শ্যাম্পু ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তবে বাড়িতে বসেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন জেনে নিই প্রাকৃতিক উপায়ে খুশকিমুক্ত চুল পাওয়ার টিপস—
লবণ
প্রতিদিনই কাজে লাগা লবণের অনেক ব্যবহারই হয়তো আমরা জানি না। মাথায় হালকা করে লবণ ব্যবহার করে দেখুন। প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে লবণ খুশকি দূর করতে দারুণ কাজ করবে। হালকা করে লবণ ব্যবহার করে তারপর শ্যাম্পু করলে শ্যাম্পুর পুরো সুবিধা আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। এছাড়া চুলকাতে থাকা খুশকি ভরা মাথায় লবণ-চিকিৎসা দারুণ প্রশান্তিও দেবে আপনাকে।
জবা ফুলের মাস্ক
৫-৬টি জবা ফুল গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ ফুলগুলো ব্লেন্ড করুন ও সামান্য পানি যোগ করে ঘন পেস্ট করে নিন। পেস্টটিতে ৩ চা চামচ গরম নারিকেল তেল মিশিয়ে মাথার স্কাল্পে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ভালোভাবে শুষে নিতে ১-২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যামিনো এসিড মাথার ত্বককে খুশকিমুক্ত করবে ও চুলের গোড়া মজবুত করবে।
মেথি মাস্ক
অর্ধেক কাপ দইয়ের মধ্যে ২ টেবিল চামচ শুকনো মেথি বীজ, ২টি আমলা ও ৩-৪টি নিমের পাতা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মিশ্রণটি ব্লেন্ড করে পেস্ট বানিয়ে নিন। মাস্কটি স্কাল্পে ভালোমতো ম্যাসাজ করে ২ ঘণ্টা রাখুন ও হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ওটমিল মাস্ক
অর্ধেক কাপ ওটমিল, ৩ টেবিল চামচ গরম দুধের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ বাদামের গরম তেল দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন ও ১ ঘণ্টা রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই পুষ্টিকর মাস্কটি শুধু খুশকিই দূর করবে না সঙ্গে চুলে ময়েশ্চারাইজের ঘাটতিও মেটাবে।
ডিমের মাস্ক
১টি ডিমের সাদা অংশ থেকে কুসুম সরিয়ে পাশে রাখুন। ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ জলপাই তেল যোগ করে মিশ্রণটি স্কাল্পে ভালোভাবে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্ক মাথার ত্বক থেকে খুশকি তাড়াবে ও চুলে পুষ্টি জোগাবে।
লেবুর মাস্ক
২ টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে অর্ধেক কাপ দই মেশান। সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু যোগ করুন। সবগুলো একসঙ্গে ব্লেন্ড করে স্কাল্পে লাগান। মাস্কটি ১ ঘণ্টা রেখে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। লেবু ও দই খুশকির বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
জলপাই তেল
খুশকির সমস্যা দূর করতে জলপাই তেল বা অলিভ অয়েলের ব্যবহার নানা দেশে খুবই জনপ্রিয়। নিয়মিত জলপাই তেল ব্যবহারে খুশকি কমে। কারণ জলপাই তেল প্রাকৃতিকভাবেই ভালো ময়েশ্চারাইজার এবং ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে বা ত্বকের আর্দ্রতা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে।
কর্পূর ও নারিকেল তেল
নারিকেল তেল ও কর্পূরের তেল নানা ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। আধা কাপ নারিকেল তেলের মধ্যে এক চা-চামচ কর্পূরের তেল নিয়ে একটা বোতল বা পাত্রে রাখুন। খেয়াল রাখতে হবে যাতে বোতলের মুখ ভালো করে লাগানো থাকে বা পাত্রটির ঢাকনা ঠিকঠাক আটকানো থাকে, যাতে ভেতরে বাতাস না ঢোকে। শুষ্ক স্থানে এভাবে রাখা পাত্র থেকে কিছুটা তেল নিয়ে প্রতিরাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মাথায় দিন। মিনিট দশেক ধরে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় মাখুন। সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে টানা দুই সপ্তাহ ব্যবহার করে উপকার পেলে ধীরে ধীরে এটা একদিন পর পর মাখুন বা আরও কমিয়ে দিন।
বেকিং সোডা
হালকা পানিতে মাথা ভিজিয়ে নিয়ে খানিকটা বেকিং সোডা পুরো মাথায় মেখে নিন। ভালো করে ঘষে ঘষে শ্যাম্পু না করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা মাথার খুলিতে থাকা ছত্রাক দমন করে প্রথমদিকে ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলতে পারে। কিন্তু অল্প দিনেই ত্বকে স্বাভাবিক তৈলাক্ত অবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু এ সময়ে আপনি খুশকি থেকে মুক্তি পাবেন।
লেবুর রস
দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে পুরো মাথায় চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে মাখুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এবার এক টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে এক কাপ পানিতে মেশান। লেবুর রস মেশানো পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। খুশকি না কমা পর্যন্ত প্রতিদিন এভাবে লেবু চিকিৎসা চালিয়ে দেখতে পারেন।
ঘৃতকুমারী
খুশকি ভরা মাথায় ঘৃতকুমারীর রস মেখে নিলে দারুণ আরাম পাবেন। খুশকির জ্বালায় দিনরাত চুলকানো থেকে খানিকটা ছুটিও দেবে ঘৃতকুমারীর রসের শীতল আরাম। এই উদ্ভিদ রসের সমৃদ্ধ উপাদানগুলো আপনার ত্বকের অনেক সমস্যাই দূর করবে।
মেথি-তেল
সাধারণ নারিকেল তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে কয়েকদিন বোতলে রেখে দিন। নিয়মিত এই মেথি মেশানো তেল মাখুন মাথায়। রাতে মেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে মাথার চুল ও ত্বক দুইই ভালো থাকবে। খুশকি থেকেও রেহাই পাবেন।