ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কিছু আসনে সমঝোতা, ১৪ দলের জন্য বাকি সব উন্মুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক ,
ঢাকা: আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে জোটগতভাবেই নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। তবে অল্প কিছু আসন জোটসঙ্গী কয়েকটি দলকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

বাকি আসনগুলোতে প্রত্যেক দল নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ১৪ দলের প্রধান শেখ হাসিনা।

সভায় জোটের যেসব দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার না করে নির্বাচনের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ১৪ দলের জোটপ্রধান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি কিছু আসনে সমঝোতা হবে এবং সেসব আসন জোটসঙ্গীদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও তিনি জোট নেতাদের জানিয়েছেন।

 

জোট নেতারা বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তারা আসন সমঝোতার বিষয়টি দু-এক দিনের মধ্যে জানানোর দাবি জানিয়েছেন। এ সময় জোটসঙ্গী দলগুলোর নেতারা নিজ নিজ দলে আসন চাহিদা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তালিকা জমা দিয়েছেন। সভা শেষে ১৪ দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটসঙ্গী দলগুলোর প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠে থাকার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

১৪ দলের বাইরের যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য প্রত্যেকে নির্বাচনে থাকার গুরুত্ব রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, নির্বাচনে যেসব দল অংশ নিচ্ছে এবং দলগুলোর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ওইসব দলের কোনো কোনোটি শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে এমনটাও মনে করে ১৪ দল। তবে শেষ মুহূর্তে এমন কিছু হলে যাতে সংকট তৈরি না হয় সেজন্য ১৪ দলের জোটসঙ্গী যেসব দলের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে নিজস্ব মার্কা নিয়েই নির্বাচনের মাঠে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে। দেশের ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকে নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত এসব চক্রান্ত উসকে দিয়েছে। আমাদের বিএনপি-জামায়াতের এসব চক্রান্তের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে দেশটাকে ছেড়ে দিতে পারি না। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি বিদেশি চক্রান্তের সঙ্গে আপস করতে পারব না। জীবন যাবে তবু বাংলার মানুষের ভাগ্য তাদের হাতে ছেড়ে দেব না। অনেকে আমার বলে আপনি সাহস নিয়ে এত শক্ত কথা বলেন কীভাবে। আমি বলি, আমার সাহস, আমার শক্তি বাংলার জনগণ।

সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৪ দলের যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকেন, দাঁড়িয়ে থাকেন। মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে না, কেউ প্রত্যাহার করবেন না। সবাই নির্বাচনের মাঠে থাকলে জনগণও নেমে আসবে। ১৪ দলগতভাবে কিছু আসনে সমঝোতা হবে। বাকি আসনগুলো উন্মুক্ত থাকবে। আপনারা সবাই নিজ নিজ দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবেন। বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, অন্য যারা এসেছে তাদের কেউ কেউ চলে গেলেও যাতে নির্বাচনের সমস্যা না হয়। সবাইকে নির্বাচনের মাঠে থাকতে হবে।

সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দিয়েছেন। জোট নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, আপনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা আমরা মেনে নেব। তবে আসন সমঝোতাগুলো দ্রুত করে দুই একদিনের মধ্যে জানিয়ে দিলে ভালো হয়। সূত্রগুলো জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ১৪ দলের জোটসঙ্গী দলগুলোর তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ১০টি, জাসদ ১০টি আসন দাবি করেছে। অন্য দলগুলোর তাদের চাহিদা জানিয়েছে। তবে এই চাহিদার মধ্যে সর্বনিম্ন চাহিদা অর্থাৎ যেগুলো তাদের না দিলেই নয় সেগুলোর বিষয়টিও তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি এগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেব। সময় মতোই আসন সমঝোতার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর সঙ্গে এ বিষয়ে সবাইকে যোগাযোগ রাখত বলেছেন। এছাড়া আমির হোসেন আমুসহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরা জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা করে আসনগুলো ঠিক করবেন।

সূত্র জানায়, এ সভায় সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক মন্ত্রী দিলিপ বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের আসনের জন্য দাবি জানিয়ে বলেছেন, নেত্রী আমার দীর্ঘ দিনের আকাঙ্ক্ষা সংসদ সদস্য হওয়ার। আমার আসনটি ছেড়ে দিলে আমার জীবনের আশা পূর্ণ হতো।