
নাজমুন নাহার, ঢাকা
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম মোস্তফা জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) মধ্যরাতে এ ঘটনায় নিজে ধানমন্ডি মডেল থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ওই চিকিৎসক।
জিডিতে ডা. এসএম মোস্তফা জামান উল্লেখ করেছেন, গত ১৩ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অসুস্থ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে সাঈদী মৃত্যুবরণ করেন। আমিও বিশেষজ্ঞ টিমের একজন সদস্য হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করি।
তিনি জিডিতে আরও লিখেছেন, কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমার ম্যাসেঞ্জারে ভীতি এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। জিডিতে তিনটি ফেসবুক গ্রুপ, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের লিংক উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান।
এদিকে সাঈদীর চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রবিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর কারাগারে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সন্ধ্যায় তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সেখানে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তার নিজ গ্রাম পিরোজপুরের সাঈদী ফাউন্ডেশনস্থ কবরস্থানে বড় ছেলে রফিক বীন সাঈদীর কবরের পাশে দাফন করা হয় তাকে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে ২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদী গ্রেপ্তার হন। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা, লুটপাট, ধর্মান্তরিত করানোসহ বিভিন্ন অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে তিনি আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। সেই থেকে কাশিমপুর কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি।