চট্টগ্রাম ব্যুরো:
শিক্ষার্থীদের জন্য চট্টগ্রামে ১০টি স্কুল বাস উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব বাসে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারেন শিক্ষার্থীরা।
তবুও কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা থেকেই যায়। সেই দুশ্চিন্তা দূর করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বাসগুলোকে স্মার্ট বাসে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কৃতও হয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮টা। স্মার্ট স্কুল বাস আসার আগেই অক্সিজেন মোড়ে শিক্ষার্থীদের ভিড়। দেখে যে কারো মনে হবে কোনো উৎসবে যাচ্ছে তারা। কিন্তু না, এ অপেক্ষা স্মার্ট স্কুল বাসের। প্রথমবারের মতো স্মার্ট স্কুল বাসে প্রিয় আঙ্গিনায় যেতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা।
বাসটি অক্সিজেন মোড় থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে প্রথমে আসে হামজারবাগ। সেখান থেকে উঠে আরো কিছু শিক্ষার্থী। এরপর মুরাদপুর হয়ে চকবাজার। কিছু শিক্ষার্থীকে সেখানে নামিয়ে জামালখান দিয়ে নিউমার্কেটের বটতলী স্টেশনে শেষ হয় যাত্রা। সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নামে শেষ গন্তব্যে। এরপর স্কুল ছুটি হলে আবারও স্মার্ট কার্ড চাপ দিয়ে বাসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তাদের নিরাপদ গন্তব্যে নামিয়ে দেন বাস মনিটরিং টিমের সদস্যরা।
শিক্ষার্থীরা বাসে ওঠা বা নামার সময় হাজিরা যন্ত্রের সামনে স্মার্ট কার্ড চাপ দিতেই খুদে বার্তা পেয়েছেন অভিভাবকরা। এ ছাড়া ঘরে বসেই জিপিএস ট্র্যাকিং ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে বাস ও শিক্ষার্থীর অবস্থানও দেখতে পেয়েছেন অভিভাবকরা।
ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলভিনা সুলতানা। সে-ও স্মার্ট স্কুল বাসের প্রথম যাত্রার সঙ্গী। তার মা শাহানাজ সুলতানা বলেন, আমাদের বাসা মুরাদপুর। আমার মেয়ে পড়ে ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রতিদিন মেয়েকে নিয়ে আমাকে যেতে হতো। আজকে থেকে স্মার্ট স্কুল বাসের যাত্রা শুরু হওয়ায় আমাকে যেতে হয়নি। মেয়েকে বাসে উঠিয়ে দেওয়ার পর সে যখন স্কুলে পৌঁছে তখন আমার কাছে একটি বার্তা আসে। আমি নিশ্চিত হই আমার মেয়ে স্কুলে পৌঁছেছে।
সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক শাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, আগে আমার ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতে হতো। আজকেই প্রথম সে গাড়ি ছাড়া স্মার্ট স্কুল বাসে করে স্কুলে গেছে। সে স্কুলে পৌঁছার পর আমার কাছে বার্তা এসেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে নিশ্চিত থাকতে পারছি।
সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শ্রীজিতা বললো, স্মার্ট স্কুল বাসের প্রথম যাত্রী হতে পেরে খুব আনন্দিত। আগে আমার সঙ্গে আমার মা আসতেন। আজকে আমি প্রথমবারের মতো একা এসেছি। স্মার্ট স্কুল বাসে ওঠার পর যখন কার্ড চাপ দেই সঙ্গে সঙ্গে আমার অভিভাবকের কাছে বার্তা গেছে। আমি যে স্কুল বাসে উঠেছি ও নিরাপদে স্কুলে পৌঁছেছি সেটি তারা নিশ্চিত হয়েছেন।
নগরের ১০টি স্কুল বাসে জিপিএস ট্র্যাকার, জিআইএস প্রযুক্তি, ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস ও আইপি ক্যামেরা স্থাপন করে এসব বাসকে ‘স্মার্ট’ করা হয়েছে। গত অক্টোবরে স্মার্ট জেলা উদ্ভাবন চ্যালেঞ্জ-২০২৩–এর আওতায় প্রথম পুরস্কার পায় এই প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে সোমবার একটি বাসের উদ্বোধন করা হয়। আজকেই শিক্ষার্থী নিয়ে এ বাস প্রথম যাত্রা করেছে।
স্মার্ট স্কুল বাস মনিটরিং টিম প্রধান সমন্বয়ক মিনহাজ চৌধুরী বলেন, স্মার্ট স্কুল বাস যাত্রার প্রথমদিনে শিক্ষার্থীরা খুবই উচ্ছ্বসিত ছিল। বিশেষ করে সারাদেশের মধ্যে প্রথম স্মার্ট স্কুলবাসে চড়তে পেরে শিক্ষার্থীদের আনন্দের মাত্রাটা ছিল বেশি৷ সুন্দর উদ্যোগটির বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জানাই।
স্মার্ট স্কুল বাস মনিটরিং টিমের উপদেষ্টা নূরুল আজিম রনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০টি স্কুল বাস উপহার দিয়েছিলেন। আজ স্কুলবাস গুলো ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ এ রূপান্তর হয়েছে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি, আমরা স্বপ্ন দেখি স্মার্ট চট্টগ্রামের। আর এই স্মার্ট চট্টগ্রাম গড়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে আমাদের এই ‘স্মার্ট স্কুল বাস’।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, আজ থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে স্মার্ট স্কুল বাস যাত্রা করেছে। এতে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারবেন। এ ছাড়া সড়কে যানজটও অনেক কমে যাবে। আশা করছি এটিকে একটি টেকসই প্রকল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। নগরের পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে আরও ১০টি বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ষূত্র; বাংলা নিউজ