ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘সামনে নির্বাচন থাকায় আইএমএফের সংস্কারে হাত দেয়নি সরকার’

নিজস্ব প্রতিবেদক,সিএনএন বাংলা২৪

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, ডাইরেক্ট ট্যাক্স বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের চরম অনীহা রয়েছে। কিন্তু ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়াতে চাচ্ছে। সরকারের হাতে এবার খুব বড় রাজস্ব নেই। ফলে সরকার বাড়তি অর্থ দিতে পারেনি।

তিনি বলেন, যে সুবিধাগুলো আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছিল, সেগুলোতে সরকার হাত দেয়নি। তার মধ্যে রয়েছে কর কাঠামোতে হাত না দেওয়া ও ইনকাম ট্যাক্সে হাত না দেওয়া। যদিও এসব খাতে সরকার এ বাজেটে হাত দেওয়ার কথা ছিল। সম্ভবত নির্বাচন সামনে বলেই সরকার আইএমএফের সংস্কারে হাত দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার আইএমএফের সঙ্গে সংস্কার কাজ অব্যাহত রাখলে নির্বাচনের পরে এসব খাতে সরকার হাত দেবে।

শুক্রবার(২ জুন) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে দূর্বলতম দিক হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া। জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, এই বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি। দুই হাজার টাকা করের যে কথা বলা হয়েছে, সেটি মাসভিত্তিতে নিলে ১৬৭ টাকা আসে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা করা হয়েছে মানে হলো ১ বা ২ কেজি চাল-ডাল বেশি কেনা যাবে। যা নিম্নআয়ের মানুষের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। আমরা বলেছিলাম, এই সামাজিক নিরাপত্তার (বয়স্ক ভাতা) পরিমাণ আড়াই হাজার টাকা করা উচিত।

এসময় সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ‘উন্নয়নের দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য ব্যয় ধরেছেন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাজেটের আকার দাঁড়াচ্ছে ১৫.২ শতাংশ। জিডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও জিডিপি ১৫.২ শতাংশ ধরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়। চলতি বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বাড়ানো হয়েছে ৮৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

অর্থমন্ত্রী ১৯৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তব্যে ব্যয়ের বিপরীতে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত কর থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান হিসেবে আসবে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অনুদানসহ মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

 

এবারের বাজেটে অনুদান ছাড়া মোট ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫.২ শতাংশ।

ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২ কোটি টাকা; সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার ও অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪