হোসেন বাবলা, চট্টগ্রাম :
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি বলেছেন, কালের বিবর্তনে আমাদের জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এদেশের মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন- ডিজিটালইজড ওয়ার্ল্ডে আমরা বসবাস করছি। পৃথিবী এগুচ্ছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর বাইরে নয়, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। জীবনকে জানা ও বুঝার জন্য বেশি বেশি করে বই পড়তে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত যাই হোক, আমাদেরকে পড়াশোনা করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যকে কোনভাবে ভূলা যাবেনা।
২০ অক্টোবর, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে মাঠে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী বিভাগীয় বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনায়, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহযোগিতায় এ বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ও সাহাবউদ্দিন মজুমদার সম্পাদিত ‘সংগ্রামে-আন্দোলনে গৌরবগাঁথায় শেখ হাসিনা’ নামক অলোকচিত্র সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করেন ভূমিমন্ত্রীসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে বইমেলা উপলক্ষে আয়োজিত রচনা, বিতর্ক, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও বই মেলায় বিজয়ী স্টল মালিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকের বই পড়ে তাদের আত্মজীবনীসহ অনেক কিছুই আমরা শিক্ষা নিতে পারি। তাঁরা কবিতা লিখেছেন বলেই আমরা জীবনের অনেক কিছু তাদের কবিতার মধ্যে দিয়ে জেনেছি। যতটুকু সম্ভব আমাদেরকে বই পড়ার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত কঠিন। জীবনকে তৈরী করতে হলে আমাদের অনেকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে, তাহলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো। যুগ পরিবর্তন হবে, সুতরাং নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা প্রত্যেকটা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকাল অনলাইন হয়ে গেছে, বইগুলোও অনলাইনে চলে গেছে, তার মাঝেও সবচেয়ে বড় সহজ হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ার ফেসবুক। ফেসবুকে লেখালেখিতে মানুষ সময় নিয়ে যাচ্ছে বেশি। ফেসবুকে অবশ্যই থাকতে হবে, তবে অধিকাংশ ইউজার ফেসবুকে প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় সময় বেশি কাটায়। এটা না করে কবি-সাহিত্যিকের বই পড়লে জীবনে অনেক কাজে আসবে।
ফেসবুকে কি এমন আমরা দেখছি, এক জনের সমালোচনা আরেক জনে করছি, এগুলো বাস্তব জীবনে কোন কাজে আসবেনা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল-মামুন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বই মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি নুরেআলম মিনা বিপিএম (বার), পিপিএম, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, প্রকাশ, গণমাধ্যমকর্মী, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সুধীজনেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিরা বলেন, উন্নত জাতি গঠনে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। প্রতিটি মানুষই এক একটি বই। মানুষ বেচেঁ থাকবেনা, কিন্তুু বই থাকবে। উন্নত জাতি গঠনে তরুণ প্রজন্ম ও যুব সমাজকে বইমুখী করতে হবে। তাহলে সন্তানেরা মাদকসহ অন্যান্য অপকর্ম থেকে সরে আসবে। বই শুধু জ্ঞান বিকাশের হাতিয়ার নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে আরও বেগবান করে। জ্ঞানকে ধরে রাখতে হলে পড়তে, বলতে, লিখতে ও জানতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, জন্ম থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞানার্জনের শেষ নেই। জাতিকে শিক্ষিত করতে হলে বেশী বেশী করে বই পড়তে হবে। এজন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তরুণ ও যুব সমাজেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে।
নতুন প্রজন্মকে বই পড়ার মাধ্যমে মানবিক জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে আমরা একদিন উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উচুঁ করে দাড়াঁতে পারবো।