এসএম জুবাইদ :
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত। সংসদীয় এই আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আশেকউল্লাহ রফিক। তিনি দশম সংসদেও উপকূলীয় এই আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের শরিক দল হিসেবে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী হামিদুর রহমান আযাদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। তার আগে বিএনপির আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ফরিদ পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গত তিন দশকে ৭টি সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১-২০১৮) আওয়ামীলীগ ৩বার, বিএনপি ৩ বার ও জামায়াতের প্রার্থী একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কুতুবদিয়ার উইং কমান্ডার জহিরুল ইসলাম। ১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম সংসদ নির্বাচনে মহেশখালীর মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই এলাকার অপর প্রার্থী মোহাম্মদ রশিদ মিয়া বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করে অল্প ভোটে হেরে যান।
এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুতুবদিয়ার বাসিন্দা জেলা বিএনপি‘র সহসভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে একই বছরের ১২ জুন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহেশখালীর বাসিন্দা, বিএনপির আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ফরিদ ধানের শীষ নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে ৮ম সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট থেকে ফের আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ফরিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওইসময় কুতুবদিয়ার বাসিন্দা নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন।
২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল, কুতুবদিয়ার বাসিন্দা এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেবারে আওয়ামীলীগ থেকে খ্যাতিমান পরিবেশ বিজ্ঞানী, মহেশখালীর বাসিন্দা প্রফেসর ড. আনসারুল করীম নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহেশখালীর বাসিন্দা, ছাত্রনেতা থেকে উঠে আসা আশেকউল্লাহ রফিক আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামীলীগ থেকে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধ না থাকলে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কুতুবদিয়া-মহেশখালী আসনে ইতোমধ্যে হামিদুর রহমান আযাদকে নিশ্চিত প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আর যদি বিএনপির সাথে জোট থাকে সেক্ষেত্রে বিএনপির অন্তত ৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে টপকে তাকে প্রার্থী হতে হবে।
বিএনপি‘র সম্ভাব্য তালিকায় দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপি‘র, সিনিয়র সহসভাপতি এবং কুতুবদিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, উপজেলা বিএনপি‘র সভাপতি জালাল আহমদ প্রার্থী হতে আবেদন বলে দলটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা বেশ বড়। দীর্ঘ দশ বছরের জনপ্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়ে শীর্ষে রয়েছেন বর্তমান এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। এছাড়া কেন্দ্রীয় আ‘লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, পরিবেশ বিজ্ঞানী ও সাবেক প্রার্থী প্রফেসর ড. আনসারুল করিম, জেলা আ‘লীগের সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রার্থী এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, মহেশখালী উপজেলা আ‘লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ, শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মো: ওসমান গণির নাম শোনা যাচ্ছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ৭ প্রার্থীর মধ্যে ৬জনই মহেশখালী উপজেলার।
এছাড়া জাতীয় পার্টির পক্ষেও আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা শোনা যাচ্ছে কুতুবদিয়া-মহেশখালী আসনে। জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ন আহবায়ক, মহেশখালীর মাহমুদুল করিম, জেলা যুগ্ম আহবায়ক ও কুতুবদিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক, সাবেক বড়ঘোপ ইউপির চেয়ারম্যান আ.ন.ম শহীদ উদ্দীন ছোটন, উপজেলার যুগ্ম আহবায়ক ও জেলা সদস্য মোহাম্মদ জাফর আলম সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আছেন বলে উপজেলা জাপার সদস্য সচিব হাজী আব্দুল মোনাফ জানিয়েছেন।
কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ তাহের বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্যসহ প্রবীণ ও নবীন অনেকেই নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থী হতে লবিং করছেন। তবে একজন ভাল লোক, সরকারের উন্নয়ন এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে আশেকউল্লাহ রফিক পরীক্ষিত জনপ্রতিনিধি। তবে দলের হাইকমান্ড যাকেই দেবেন নৌকা, তারা তার জন্যই কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।