ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এবার সব হবে ঢাকায়, চট্টগ্রামে ঘোষণা দিলেন মির্জা ফখরুল

ইকরা তৌহিদ মিম, চট্টগ্রাম :

 

সরকার পতনের একদফা দাবিতে মাসব্যাপী রোডমার্চ কর্মসূচি শেষে চলতি মাসে অনশন, মহাসমাবেশসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে দুর্গাপূজার জন্য আপাতত কঠোর আন্দোলনে না যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

 

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে নগরীর নুর আহমদ সড়কে দলীয় কার্যালয়ের পাশে অনুষ্ঠিত রোডমার্চ পরবর্তী সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

 

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে ৯ অক্টোবর সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হবে। ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর দাবিতে ১২ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র কনভেশন আহ্বান করা হয়েছে। ১৫ অক্টোবর সারাদেশে অনশন এবং ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুব সমাবেশ হবে। এরপর ১৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

 

এ মহাসমাবেশই যেন শেষ সমাবেশ হয়- এমন মন্তব্য করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর বলেন, ‘আমরা শুধু এ মাস দেখব। সামনে দুর্গাপূজা, কঠোর আন্দোলনে যেতে চাই না। নতুন কমর্সূচি ঘোষণা করেছি। আমরা চাই, এর মধ্যে আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ভালোয় ভালোয় ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।’

 

তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী, অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী। যদি কোনো অশান্তি হয়, কোনো হয়রানি বা মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয় সেটা বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। আঘাতের জবাবে প্রত্যাঘাত করা হবে, প্রতিরোধ করা হবে আর এটাই হবে এ মুহূর্তের বিজয়ের সূচনা। পতন হবে সরকারের।’

 

রোডমার্চে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সব মানুষ আজ রাস্তায়। মানুষের মুখে এখন একটাই স্লোগান, শেখ হাসিনা কবে যাবি। মানুষের জন্য সেই বার্তা আমরা নিয়ে এসেছি। অনেক কথা হয়েছে, রোডমার্চ, সমাবেশ হয়েছে। এটাই শেষ রোডমার্চ। আর রোডমার্চ হবে না। এবার সব হবে ঢাকায়।’

 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা, আপনি অনেক মানুষ খুন করেছেন। হাত রঞ্জিত করেছেন, আমাদের অনেক ভাইকে হত্যা করেছেন, স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন, সন্তানকে পিতৃহারা করেছেন। আমরা আর এসব করতে দেব না। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব, অন্যায় হুকুম শুনে আর কোনো গুলি করবেন না। মিথ্যা মামলা দিয়ে আর কোনো নির্যাতন করবেন না। মানুষ আজ জেগে জেগে উঠেছে।’

 

আওয়ামী লীগ বন্দুকের জোরে ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ চায়, শান্তিপূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হস্তান্তর করুক। শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচন আমরা চাই না, জনগণও চায় না। সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। মানুষ তার ভোট দিয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচন করবে।’

 

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেটা তুমি নিজের মুখেই স্বীকার করেছ। তুমি বলেছ, খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে, আর বাঁচার দরকার কী ! এর থেকে প্রমাণ হয়েছে, খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, এ হত্যার রাজনীতি আমরা দেখতে চাই না।’

 

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজ সমস্ত বিরোধীদল ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। সারাবিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে বাংলাদেশকে। তারা বলছে ভোটচোরদের ধরতে। তারা ভদ্র ভাষায় বলছে, আমরা ভোটচোরদের মানি না। তাদের বিতাড়িত করতে হবে। সারাবিশ্বের কাছে এরা ভোটচোর। এজন্য স্যাংশন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখনও সময় আছে। ফ্যাসিস্টরা কখনও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়ে না। তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হটাতে হবে। এই স্বৈরাচারী সরকার তাদের ভোটচুরির প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আবার পাঁয়তারা করছে। সেই পাঁয়তারা বন্ধে আমাদের পাহারা দিতে হবে। নিবিড়ভাবে নজরদারি রাখতে হবে। ছাড় দেওয়া যাবে না। তারাও জানে, এবার তারা আগের মতো ভোটচুরি করে পার পাবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানুষ রোড মার্চের মাধ্যমে শেষ বার্তা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা থেকে শুরু করে লাখ লাখ জনতা আমাদের সাথে রোডমার্চে অংশ নিয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে, তবুও কেউ যায়নি। বাংলাদেশের মানুষ আজ এই রোডমার্চ থেকে শেখ হাসিনাকে শেষ বার্তা দিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগ ও কুমিল্লা রোডমার্চের যে বার্তা শেখ হাসিনাকে দিয়েছে, সেই কপালের লিখন যদি তিনি পড়তে না পারেন তাহলে সেটা তার দুর্ভাগ্য।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন কোনো রাজনৈতিক দল নয়। র‌্যাব, পুলিশ, বিচার বিভাগ দিয়ে রেজিমে পরিণত হয়েছে। আর বিএনপি পরিণত হয়েছে খাঁটি সোনায়। আমাদের ৪০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারা ঘরে থাকতে পারে না। তাই বিএনপি এখন সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বিএনপি নেতারা জলে ভিজে আর রোদে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে।’

 

সমাবেশে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘কুমিল্লা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চে লক্ষ লক্ষ জনতার সমাবেশ হয়েছে। শেখ হাসিনা এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দূরদর্শী পরিকল্পনা সফল হয়েছে। চট্টগ্রামের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রোড মার্চ কর্মসূচি সফল হয়েছে। আসুন, আরামকে হারাম করে সরকার পতনের ফাইনাল আন্দোলনে নেমে পড়ি। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করি।’

 

ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভালোবাসে। অথচ তিলে তিলে তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সময় তাকে স্লো-পয়জনিং করা হয়েছিল। বিদেশে চিকিৎসা করাতে গেলে সেটা ধরা পড়ে যাবে। তাই তাকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’

 

ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের আমার সাথে জেল খেটেছেন। জেলখানায় বসে শুধু একটাই কাজ ছিল তার, কান্না করা আর চুলের স্টাইল করা। আমি বলব তাকে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে অভিনয়ে নাম লেখাতে। জনস্রোত দেখে আওয়ামী লীগ পালানোর পথ খুঁজছে। তাদের পালাতে দেওয়া যাবে না। পাহারা দিতে হবে। তাদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, মৎস্যজীবী সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ও মোস্তাক আহমেদ, উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক মা ম্যা চিং, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, গাজী শাহজাহান জুয়েল, আলমগীর মাহফুজুল্লা ফরিদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সাচিং প্রু জেরী, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, তরিকুল আলম তেনজিং, কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদল সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।

 

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪