আব্দুল বাছিত খান, মৌলভীবাজার :
মো. রিহান। বয়স ৩ বছর ৭ মাস। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরতলীর সিন্দুরখান আবাসিক এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম লিয়াকতের পুত্র। এ বয়সেই এক চিকিৎসকের খামখেয়ালিপনায় চরম দুর্ভোগে অনিশ্চিত দিনানিপাত করছে শিশুটি। এ নিয়ে শিশুটির পিতা ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
লিয়াকতের অভিযোগ, তার ৩ বছর ৭ মাস বয়সী পুত্র মো. রিহান গত ২৮ আগস্ট দুপুরে নিজ বাসায় খাটের উপর থেকে পড়ে গিয়ে বাম হাতে আঘাত পায়। তিনি শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পুত্রের আঘাতের স্থান এক্সরে করান। এক্সরেতে Fracture Lt humeral condyle রিপোর্ট আসলে সাথে সাথে তার শিশুপুত্রকে মৌলভীবাজার শহরের লাইফ লাইন হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোনকলে ওইদিনই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট (অর্থো. সার্জারি) ডা. আব্দুুল্লাহ আল মামুন লাইফ লাইন হাসপাতালে এসে তার শিশুপুত্রকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। এরপর তিনি ও লাইফ লাইন হাসপাতালের চিকিৎসা সহকারীদের সামনে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন আকস্মিক তার শিশুপুত্রের হাত ধরে প্রচন্ড শক্তিতে টান মারেন।
এতে বিকট শব্দ হয় এবং শিশু রিহান গগণবিদারী চিৎকার করে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। তখন তিনি (লিয়াকত) ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বলেন, আপনি এটি কি করলেন? আমার মনে হয় বাচ্চাটির পুরো হাতই ভেঙ্গে ফেললেন। আমি এ কথা বলার সাথে সাথেই ডা. মামুন আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর ব্যথায় কাতর ও বিপর্যস্থ অবস্থায় তিনি শিশু রিহানের বাম হাত প্লাস্টার করে বিদায় করে দেন। ওইরাতে শিশু রিহান হাতের অসহ্য যন্ত্রণায় সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি। এতে লিয়াকতের সন্দেহ ঘণিভূত হয়। ফলে পরদিন ২৯ আগস্ট সকালে প্লাস্টার থাকাবস্থায় পুণরায় তিনি তার পুত্রের বাম হাত এক্সরে করান। এতে রিপোর্ট আসে Under castfracture Lt humerus. ২৮ ও ২৯ আগস্টের দুটি রিপোর্ট তিনি তার পূর্ব পরিচিত ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ড সার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল ইসলামকে ওয়াটসআপে প্রেরণ করেন। তিনি রিপোর্ট দুটি দেখে ওই চিকিৎসক লিয়াকতকে জানান, রিহানের হাতের হাড় আগে ছিল ফাটা এবং এখন দেখা যায় হাড় ভেঙ্গে দুই ভাগ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপারেশন না করা হলে ভবিষ্যতে শিশুটি পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
এ কারণে দ্রুত অপারেশন করতে হবে। ওইদিনই রাতে তিনি তার শিশুপুত্রকে নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি জেনারেল এন্ড কিডনী হসপিটাল লিমিটেডে যান। পরদিন ৩০ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল ইসলাম শিশু রিহানের হাতের অপারেশন করেন। অপারেশনের পরে রোগ নির্ণয় হয় Closed Displaced Suprachondylar Fracture of left humerus. পরবর্তীকালে লিয়াকত দীর্ঘ সময় ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা শেষে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের খামখেয়ালিপনার বিচার দাবি করে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত আবেদন করেন।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট (অর্থো. সার্জারি) ডা. আব্দুুল্লাহ আল মামুনের ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে গত বুধবার সন্ধ্যায় একাধিকবার কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। বিষয়ের ব্যাপারে তার বক্তব্য চেয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলে তিনি পরদিন বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর তার চেম্বারে গিয়ে দেখা করার জন্য প্রতিবেদককে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করেন।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, ‘ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মো. আশরাফুল ইসলাম লিয়াকত একটি লিখিত অভিযোগ তার দপ্তরে প্রেরণ করেছেন। অভিযোগটি পেয়েছি। তার এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাটির তদন্ত করার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। তদন্ত শেষে কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’