ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গুম একটি ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধ : নজরুল ইসলাম খান

শেখ আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম:

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সারাদেশে বিএনপির ছয়শ’ জনের অধিক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। দুঃশাসন থেকে উৎপন্ন হয়েছে গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী হিংস্রতা। স্বৈরাচারী সরকারের গড়ে তোলা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিরোধী দলের প্রতিবাদী নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গুম করে রাখা হয়। আজকে রাজনৈতিক কারণে গুমের শিকার মানুষ মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করছে। গুম হচ্ছে একদলীয় দুঃশাসনের নমুনা। আওয়ামীলীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গুমকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে গুমকে পথের কাঁটা দূর করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ নৃশংস গুমের শিকার হয়েছেন সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর নজরুল ইসলাম বাচা চেয়ারম্যানসহ অসংখ্য মানুষ। আরেকটি অভিনব গুমের শিকার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, কক্সবাজারের সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয়েছে অন্য দেশে।

 

তিনি বলেন, গুম একটি ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধ। প্রতিটি গুমের তদন্ত ও বিচার একদিন হবেই।

তিনি বুধবার (৩০ আগষ্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউরি নুর আহমদ সড়কে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

 

নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে কালো ব্যানার নিয়ে কাজীর দেউরী নুর আহমদ সড়ক থেকে মৌন মিছিল শুরু করে নেভাল মোড়, লাভ লেইন হয়ে কাজীর দেউরী মোড় হয়ে পুনরায় নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মিছিল শেষ হয়।

 

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম।

 

নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনসমর্থনহীন সরকারের টিকে থাকার অবলম্বনই হচ্ছে গুম। এই ধারা বয়ে চলতে চলতে দেশ অরাজকতার ঘন অন্ধকারে ডুবে গেছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে।

 

তিনি বলেন, আসুন- আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হই। কেবলমাত্র একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হলেই গুম, অপহরণ, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ দূর হবে, জন জীবনে স্বস্তি ফিরবে।

 

প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে জনপ্রতিনিধি, তরুণ, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। জোরপূর্বক গুমের শিকার প্রায় ১০০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অনেককে অনেকদিন পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, তাদের এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি গুমের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের অবিলম্বে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।

 

সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আওয়ামী সরকার। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব। গুম ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সংবাদমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তাতে সরকারের টনক নড়ে না। এতেই বোঝা যায় এসব গুমের হোতা কারা। বাংলাদেশে গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। গণতন্ত্রের কবর রচনার জন্যই গুমের মতো অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। বিএনপিকে নির্মূল করে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করাই এর মূল লক্ষ্য।

 

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বহুদিন পর অনেককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।এখনো অসংখ্য গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। এক্ষেত্রে প্রায় সবাই দাবি করেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়েই তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু গুম খুন করে আওয়ামীলীগের শেষ রক্ষা হবে না। তাদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবেই।

 

এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক এড. আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, হারুন জামান, মাহবুব আলম, নিয়াজ মো. খান, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, মন্জুর আলম মন্জু, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মন্জুর আলম চৌধুরী মন্জু, সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, কেন্দ্রীয় জাসাসের সদস্য আমিনুল ইসলাম, থানা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. সালাউদ্দীন, মো. সেকান্দর, আবদুল্লাহ আল হারুন, ডা. নুরুল আবছার, থানা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জাকির হোসেন, হাজী বাদশা মিয়া, মাঈনুউদ্দীন চৌধুরী মাঈনু, আবদুল কাদের জসিম, মহানগর কৃষকদলের আহবায়ক মো. আলমগীর, সদস্য সচিব কামাল পাশা নিজামী, ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, তাঁতীদলের আহবায়ক মনিরুজ্জামান টিটু, জাসাসের সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ শিপন প্রমূখ।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪