শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী
পাহাড়-সাগর বেষ্টিত চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা। বাঁশখালীর আঞ্চলিক প্রধানসড়কটি বাঁশখালীকে দু’ভাগে ভাগ করে নিয়েছে। সড়কের পূর্বাংশে সুউচ্চ পাহাড়ি অঞ্চল। পুঁইছড়ি, চাম্বল, শীলকূপ, জলদী, বৈলছড়ি, কালীপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া ইউনিয়নের বিশাল অংশ জুড়ে পাহাড়ি এলাকা।
অপরদিকে ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, কাথরিয়া, সরল, বাহারচরা, খানখানাবাদ ইউনিয়নের বৃহত্তম অংশ জুড়ে উপকূলীয় এলাকা। প্রবল বৃষ্টি বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় উপকূলীয় ও পাহাড়ী অঞ্চলের সকলকে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। বাঁশখালীর ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে প্রায় ৫ লাখের মতো লোকের জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল।
অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভূমিদস্যুদের ছড়া-খাল দখলের মহোৎসবে জর্জরিত জনপদ বাঁশখালী। যার ফলশ্রুতিতে টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় বাঁশখালীর নিম্নাঞ্চল। প্রতি বর্ষামৌসুমে কোটি টাকার সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়, পানিবন্ধি হয় কয়েক হাজার বসতঘর, তলিয়ে যায় রাস্তা-ঘাট। সঠিকভাবে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, ছড়া-খাল ভরাট করে অবৈধ দখলবাণিজ্যের ফলে পানি চলাচলে বাঁধার করানে পুরো বাঁশখালী বার বার নানা ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখিন হয়।
বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা পুঁইছড়ি, চাম্বল, শীলকূপ, জলদী, বৈলছড়ি, কালীপুর, সাধনপুর সংযোগ শতবর্ষী ছড়াগুলো রাঘববোয়াল ও ভূমিদস্যুদের অবৈধ দখলে। এ ছড়া দখল করে গড়ে তুলেছে বসতঘর, দোকানপাট ও নানা স্থাপনা। কোনরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দিনদিন গ্রাস করে নিচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ছড়াগুলো। এতে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানির স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে পানিবন্ধি হয়ে পড়ে উপকূলের ও পাহাড়ী অঞ্চলের লোকজন। এতে মাছের ঘের, ফসলি জমি তলিয়ে যায়। প্রান্তিক কৃষকের লালিত স্বপ্ন চোখের সামনে ভেসে যায়। কোটি টাকার সবজি ক্ষেত কয়েকদিনের টানাবর্ষণে বিলিন হয়ে যায়।
এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদাসিন্যতার কারণে বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী জলকদর খালগুলো প্রায় গিলে খাওয়া শেষের পথে। এখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির যোগসাযশে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা প্রতিনিয়ত দখল করে নিচ্ছে জলকদর খাল। সরিজমিনে দেখা যায়, চাম্বল বাংলাবাজার, ডেপুটিঘোনা, শীলকূপ-সরলের মিলন মোহনা জালিয়াখালী খালের স্লুইসগেইটের মুখেই দোকানঘর স্থাপন, বাহারছড়া বশির উল্লাহ মিয়াজি বাজার সংলগ্ন জলকদর খাল দখল সহ বাঁশখালী জুড়ে জলকদর খাল দখলের মহোৎসবে সংকোচিত হচ্ছে পানি চলাচলের পথ। যার দরুণ অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যায় অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে এ জনপদের নিম্নাঞ্চল। ছড়া ও জলকদর খাল উন্মক্ত করা না হলে আগামীতে বিশাল ক্ষতির সম্মুখিন হবে বাঁশখালীবাসী এমনটি ধারণা সচেতন মহলের।
এদিকে চলতি সপ্তাহের পাঁচদিনের টানা বর্ষণে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কয়েক হাজার বসতঘর পানিবন্ধি হয়ে পড়ে। ভারীবর্ষনে প্লাবিত হওয়ার ফলে পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার পরিবার। এতে চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। টানা বৃষ্টির ফলে উপজেলার গণ্ডামারা, বড়ঘোনা, শীলকূপ, ডেপুটিঘোনা, চাম্বল, শেখেরখীল, ছনুয়া, পুঁইছড়ি, পুকুরিয়ার তেইচ্ছিপাড়া, প্রেমাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। এতে ওইসব গ্রামের সাথে উপজেলা সদরের একধরনের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
শেখেরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা মোর্শেদ আলম ফারুকী জানান, এ বর্ষায় শেখেরখীল ইউপির টেকপাড়া এলাকার ইউপি সড়কটি তলিয়ে যাওয়াতে অন্তত ৫’শ পরিবারের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এলাকার মানুষের পুকুর, মৎস্য প্রজেক্ট, ক্ষেতখোলা ও কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়াতে এই এলাকার মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
গণ্ডামারা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ওসমান গণী জানান, পানি নিষ্কাসনের জন্যে গণ্ডামারা-বড়ঘোনায় ৮টি স্লাইচ গেইট থাকলেও শুধুমাত্র ২টি স্লাইচগেইট উম্মুক্ত ছিল, বাকী ৬টি স্লাইচ গেইট স্থানীয় প্রভাবশালীরা চিংড়ি প্রজেক্টের নামে দখল করে রাখার ফলে পানির স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। এ অঞ্চলে ব্যাপক টমেটোর চাষ হয়। এ বর্ষায় তার সবটুকু তলিয়ে যায়।
শীলকূপ ইউপির চেয়ারম্যান কায়েশ সরওয়ার সুমন বলেন, টানা বর্ষণে শীলকূপের পশ্চিম অঞ্চলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে তলিয়ে যায় মাছের প্রজেক্ট, বসতঘর। জালীয়াখালী জলকদর সংলগ্ন বেড়ীবাঁধটি নিমার্ণ হলে এ ক্ষতি থেকে বাঁচবে শীলকূপের পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী।
বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের জলকদর খালের স্লুইচ গেইট ও কালভার্টগুলো দ্রুত মেরামত ও দখলমুক্ত করা না হলে ওইসব এলাকার মানুষ আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে আশংকা করছে স্থানীয় সচেতন মহল।
এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪