সিএনএন বাংলা ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নিয়মে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় বাংক। দেশে এখন প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৩৫৬ কোটি (২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন) ডলার। বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (১২ জুলাই) দেশের রিজার্ভ ২ হাজার ৯৯৭ কোটি ডলার ( ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন) ডলার। তবে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রকৃত রিজার্ভে ৬৪০ কোটি ডলার বাদ দেওয়া হয়েছে। সে কারণে প্রকৃত রিজার্ভ নেমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারে। প্রতি মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ।
সারা বিশ্বে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) অনুযায়ী, রিজার্ভ গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানের জন্য প্রদত্ত ঋণ গ্যারান্টি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুদ্রা বিনিময়, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ঋণ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত নয়। এসব খাতে বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ৬৪০ কোটি ডলার দেওয়া আছে, যা বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য শর্ত দিয়ে ৪৭০ কোটি ( ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। এই ঋণ সাত কিস্তিতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত দেয়া হবে। এই ঋণের সুদের হার দুই দশমিক দুই শতাংশ। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ইতিমধ্যে পেয়েছে বাংলাদেশ। পরবর্তী কিস্তি পেতে সংস্থাতির দেয়া শর্ত পূরণ করছে। এরি অংশ হিসাবে প্রকৃত রিজার্ভ ঘোষণা করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ দিক থেকে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছায়। ওই বছর ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে। এরপর তা বেড়ে করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট। ওইদিন রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে উঠে যায়। এরপর ডলার সংকটে গত বছর থেকে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ সালে ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৩৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন। ২০২০-২১ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।
নুর মোহাম্মদ, সিএনএনবাংলা২৪