সিএনএনবাংলা ডেস্ক:
বুকের দুধ খাচ্ছে এক বছর চার মাসের শিশু সাব্বির। এমন অবস্থায় পিরিয়ড বন্ধ হয় শাহেদা বেগমের। পরীক্ষা করে দেখেন আবারো গর্ভধারণ করেছেন তিনি। কপালে চিন্তার ভাজ তার। কারণ সাব্বিরের আগেও তিন সন্তানের মা তিনি। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। উপায় না পেয়ে ছুটে যান নগরীর মুন্সি পুকুর পাড়ের এফপিএবি ক্লিনিকে। সেখানে তিনি গর্ভপাত ঘটান।
করোনা পরবর্তী সময়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের প্রবণতা বেড়েছে চট্টগ্রামে। যার ফলে চট্টগ্রামে মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মহার (টিএফআর) বেড়েছে বলে জানায় চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভিসের (বিডিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে ২০১৭ সালে মহিলা প্রতি গড় সন্তানের জন্মহার ছিল দুই দশমিক পাঁচজন। যাতে একজন মহিলা গড়ে দুই থেকে তিনজন সন্তান জন্ম দিয়েছে। কিন্তু পাঁচবছর পর ২০২২ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায় মহিলা প্রতি গড় সন্তানের জন্মহার বেড়ে হয়েছে দুই দশমিক ছয়জন। প্রতিজন নারী তিন থেকে চারজন সন্তান জন্ম দিচ্ছেন।
জন্মহার বাড়ার কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, করোনায় পর্যাপ্ত সেবা দেয়া সম্ভব হয়নি। জনবল সংকট থাকায় সবার দ্বারে দ্বারে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা পৌঁছাতে পারেনি। জন্ম নিয়ন্ত্রণে কাজ করা এনজিও সংস্থাগুলোও কোভিডে ফান্ড সংকটে পড়ে যায়। যে কারণে তারাও পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারেনি। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শুধুমাত্র নারীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় এবং পুরুষের অংশগ্রহণ কম থাকা। এছাড়া অতীত থেকেই একটি বড় সমস্যা ছিল ধর্মীয় অনুভূতি। যা এখনো অনেকের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। এসব কারণে ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে জন্মহার বেড়েছে। তবে জন্মহারের প্রবণতা শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলেই বেশি।
তিনি বলেন, তবে সমস্যা সমাধানে সরকারের চলমান উদ্যোগগুলোর পাশাপাশি আরো কিছু উদ্যোগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য- জনবল সংকট নিরসনে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শতাধিক কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোভিডের কারণে বন্ধ থাকা সেবাগুলো পুনরায় চালু হয়েছে। যেমন বিনামূল্যে তিন মাস মেয়াদি ইনজেকশন প্রদান, খাবার বড়ি দেয়া ও নাম মাত্র ১০ পয়সায় কনডম বিতরণ করা হচ্ছে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের অংশগ্রহণ বাড়াতে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে গ্রামাঞ্চলগুলোতে। আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোতে দম্পতিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। অস্থায়ী পদ্ধতি (দীর্ঘমেয়াদি) ইনপ্ল্যান্ট, আইইউডি এবং স্থায়ী পদ্ধতি মধ্যে টিউবেকটমি (লাইগেশন) মহিলাদের জন্য এবং এনএসভি (নন-স্কালপেল ভ্যাসেকটমি) যা পুরুষদের জন্য স্থায়ী পদ্ধতি সেবার বিষয়ে তাদের জানানো হচ্ছে। এসব সেবা গ্রহণকারীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই সেবা পাচ্ছেন। এছাড়া বাল্যবিয়ে বন্ধের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। পূর্বকোণ অনলাইন।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভিসের (বিডিএইচএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে সারাদেশে ৬৪ শতাংশ দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি (সিপিআর) ব্যবহার করছে। এরমধ্যে শুধু চট্টগ্রামেই ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ সক্ষম দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
নুর মোহাম্মদ, সিএনএনবাংলা২৪