ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জিয়া বাড়ি-গাড়ি দিতে চেয়েছিল: শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা:

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তাকে বাড়ি-গাড়ি দিতে চেয়েছিল। জবাবে তিনি বলেছিলেন খুনির কাছ থেকে তিনি কিছু নিতে পারেন না।

শুক্রবার (১৭ মে) সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে তাকে ফুলেল জানান দলটি এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর জিয়াউর রহমানের বাধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৩২ নম্বরে আমরা মিলাদ পড়তে চাইলাম আমাকে ঢুকতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। উল্টো বলেছিল বাড়ি দেবে, গাড়ি দেবে, সব দেবে। বলেছিলাম তার কাছ থেকে কিছু নেব না। খুনির কাছ থেকে আমি কিছু নিতে পারি না।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যখন দিল্লীতে ছিলাম সেখানে গিয়ে জিয়াউর রহমান আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল, তার স্ত্রীও দেখা করতে চেয়েছিল। তিনি (শেখ হাসিনা) দেখা করেন নাই। লন্ডনে যখন তখনও দেখা করতে চেয়েছিল, আমরা দেখা করিনি। যখন দেশে আসলাম ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেবে না, উল্টো বাড়ি-গাড়ি সাধবে, সেটাতো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না।

দেশে ফিরে কোথায় উঠবেন, থাকবেন সেটা জানতে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু আমার পরার কাপড়চোপড়, দুটি স্যুটকেস ও পুতুলকে (মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) নিয়ে আমি চলে এসেছি। তারপর এ যাত্রা শুরু। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে দলকে গোছানোর চেষ্টা করেছি।

আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জানতেন না, তাকে এত বড় একটা দায়িত্ব দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, লন্ডন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুর রহমান টেলিফোন করে বললেন আপনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি তাকে বললাম আমিতেো আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চাই না, আমাকে কেন করবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আছে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার দিনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেদিন সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়েছিল। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বক্তব্য রাখলাম, সব থেকে বড় কথা হলো যখন বিদেশে যাই তখন কামাল, জামাল, রোজি, খুকি সবাই বিমানবন্দরে ছিল। যখন ফিরে আসলাম পেলাম হাজার হাজার মানুষ, আর পেলাম বনানীতে সারি সারি কবর।

তিনি বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেই, কিন্তু অত্যন্ত এইটুকু বলতে পারি, তার বাংলাদেশ, কিছুটা হলেও তিনি যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন কিছুটা হলেও সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।

এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলবো, আমার সব শক্তি-সাহস মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। যেদিন আমার বাবাকে হত্যা করা হয়..উনিতো কোনোদিন বিশ্বাস করেননি বাঙালি তাকে হত্যা করতে পারবে। আমার মা কখনো জীবন ভিক্ষা চাননি।

আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করে টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যদি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা না থাকে, দেশপ্রেম না থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় না থাকে, তাহলে সেটা এগোতে পারে না।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছিল, দেশের কোনো উন্নতি করতে পারেনি। আজকে আমরা বলতে পারি দেশটা বদলে যাওয়া, বদলাতে পেরেছি। সামনে আরও বদলাতে হবে। কারণ আমার বাবার একটাই স্বপ্ন ছিল দেশটাকে গড়ার। আমাদের পরিকল্পনা সেটাই আছে।

আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দল হিসেবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী বড় সংগঠন। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দল আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, প্রতিবার চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, কী পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা করেনি। ভবিষ্যৎ কি সেই চিন্তাও করি না। চিন্তা করি দেশের মানুষের ভবিষ্যতটা আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলে দিয়ে যাব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

দলীয় নেতাদের আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, এটাই মনে রাখবেন একটা দল করি শুধু নেতা হওয়া না, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কি দিতে পারলাম, কি দিয়ে গেলাম। এটাই রাজনৈতিক মানুষের জীবনের বড় কথা। এই কথাটা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।

সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আর যেন যুদ্ধাপরাধী, খুনিরা যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে এই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।