স্টাফ রিপোর্টারঃ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাইজডিহি চা বাগানে চার মাস যাবৎ এক নারী উদ্যোগক্তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তালা লাগিয়ে বন্ধ করে রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মেম্বার।
এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানায় বার বার লিখিত অভিযোগ করেও কোন সমাধান পাচ্ছে ভোক্তভুগী অসহায় নারী উদ্দ্যোক্তা। দিনের পর দিন থানার বারান্দায় ঘুরছেন। এমনকি মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের দেওয়া নির্দেশও কার্যকর করছেন না শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জসহ তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শহিদুল ইসলাম দীর্ঘ চার মাস ধরে কালক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ তুলেন নারী উদ্দ্যোক্তা মিনু সিং ছত্রী। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একমাত্র ছেলে সন্তান সহ পঙ্গু মা ও বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভোক্তভুগী স্বামী ছাড়া এই নারী।
অনুসন্ধানে জানাযায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাইজডিহি চা বাগানের ৯নং লাইনে মা টেইর্লাস নামে একটি টেইলারিং ও কাপড়ের দোকান খোলে প্রায় ৮ বছর যাবৎ সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে নিয়মিত দোকানের ভাড়াও পরিশোধ করে আসছেন এলাকার অর্জুন সিং ছত্রীর মেয়ে মিনু সিং ছত্রী নামের এক নারী। তার সংসারে রয়েছে পঙ্গু মা, বৃদ্ধ বাবা ও একমাত্র ছেলে। ব্যবসার আয়ে চলে তার ৫ সদস্যের দিনাতিপাত সংসার। দীর্ঘদিন ধরে কালাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য অমৃত সিং ছত্রী নামের ইউপি সদস্যের কু-নজর পড়ে মিনু সিং ছত্রীর উপর। তার কথা মতো না চলার কারণে মেম্বারের রোষানলে পড়ে সে। স্থানীয় দোকান কোঠার মালিক সুলতান মিয়াকে প্রভাবিত করে গত ৮ ফেব্রুয়ারী রাতে মিনু সিং ছত্রী দোকান বন্ধ করে আসার পর মেম্বার অমৃত সিং ছত্রী দোকানের তালা ভেঙ্গে অন্য একটি তালা লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে মিনু সিং ছত্রী শ্রীমঙ্গল থানায় অমৃত সিং ছত্রী ও দোকান মালিক সুলতান মিয়ার বিরুদ্ধে ১টি অভিযোগ করলে ১২ ফেব্রুয়ারী ৩নং শ্রীমঙ্গল ইউপির মহিলা সদস্য মালেকা বেগম ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে একটি আপোষনামা করা হয়।
পরবর্তীতে ৫নং কালাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতলিব সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে দোকান খোলতে গেলে মেম্বার অমৃত সিং ছত্রী উপস্থিত লোকজনের সম্মুখে মিনু সিং ছত্রীকে মারধর সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে চেয়ারম্যান আব্দুল মতলিব মিনু সিং ছত্রীকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেন।
এব্যাপারেও মিনু সিং ছত্রী শ্রীমঙ্গল থানায় বাদী হয়ে অভিযোগ দেন। শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ কোন ভুমিকা না নেওয়ায় মিনু সিং ছত্রী মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারকে অবগত করলে পুলিশ সুপার মনজুর রহমান বিপিএম, পিপিএম (বার) শ্রীমঙ্গল থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায়কে কার্যকারী ব্যবস্থা নিতে বলেন। এরপরও সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্তদের পক্ষে সাফাই গেয়ে মিনু সিং ছত্রীকে তার মালপত্র দোকান থেকে বের করে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
অনুসন্ধানে আরো জানাযায়, ইউপি সদস্য অমৃত সিং ছত্রী একজন মাদক সম্রাট। বিগত ৮ জুলাই ২০১৯ সালে বিপুল পরিমাণ গাঁজা পাচারকালে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। শ্রীমঙ্গল থানা সূত্র জানা গেছে, অমৃত সিং ছত্রী একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার উপর একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে। বর্তমানেও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন বলেও লোক মুখে কানাঘুষা রয়েছে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে নানা হয়রানির স্বীকার হতে হয়। তার দাপটে অতিষ্ঠ চা বাগানের শ্রমিক সহ বাগানে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারী। ইতিপূর্বে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চা বাগানে কর্মরত জনৈক জেনারেল ম্যানেজারকে জনসম্মুখে মারপিট করে বাগান থেকে বিতারিত করেছে বলেও জানা যায়।
এব্যাপারে মেম্বার অমৃত সিং ছত্রীর সাথে যোগাযোগ করলে অকথ্য ভাষায় মিনু সিং ছত্রীকে নিয়ে মন্তব্য করেন। এক পর্যায়ে বলেন, মৌলভীবাজারের এসপি, ওসি, দারোগা আমার পকেটে। থানায় অভিযোগ করে আমাকে কিছু করতে পারবে না। সে যদি আমার কথা মতো চলে, আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চায়, তাহলে আর ভাড়াটি দোকান হবে না। আমি প্রয়োজনে দোকান কিনে দিবো।
শ্রীমঙ্গল থানার এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি মিনু সিং ছত্রীকে বলেছি তোমার মালামাল আমার সামনে বের করে নাও। অন্যত্র ঘর নিয়ে ব্যবসা করো। আইনিভাবে কোন লিখিত নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে কোন ব্যবসায়ীকে ঘর থেকে বের করার বিধান আছে কি না জানতে চাইলে সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি।
৫নং কালাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতলিব বলেন, তাদের আপোষ মিমাংসা হওয়ার পর আমি উপস্থিত থেকে সরেজমিনে গিয়ে দোকান খুলে ছিলাম। এ সময় মিনু সিং ছত্রী তার ২টি সেলাই মেশিন নাই বলে জানায়। তখন মেম্বার অমৃত সিং ছত্রী তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পরিস্থিতি ভালো নয় দেখে আমি তাকে সরে যেতে বলি। বর্তমানে মেম্বারের কারণে বিষয়টি সমাধান করা হচ্ছে না। আমি মিনু সিং ছত্রী এর আইনি সাহায্য যতটুকু লাগে করবো।
পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান বিপিএম. পিপিএম (বার) বলেন, আমি শ্রীমঙ্গল সার্কেলকে বলে দিয়েছি। মিনু সিং ছত্রী যোগাযোগ করলে আইনি সাহায্য পাবে।