নিজস্ব প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটে এক কিশোরীকে দুই মাস আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের ১১নং ওয়ার্ডের সভাপতি আব্দুস সালামকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় সিলেট নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
সোমবার (১ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিঠু।তিনি বলেন, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আব্দুস সালামকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আব্দুস সালাম নগরের লালাদিঘির পার এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে। এ ছাড়াও এ মামলার অপর আসামি আব্দুল মনাফ (৩৮) একই এলাকার ইশাদ মিয়ার ছেলে। তিনি সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। এ ছাড়াও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নির্যাতিতা ওই তরুণী নগরীর শেখঘাটের একটি বোতল ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। পরিবারের সদস্যরা ওই তরুণীকে সিলেট শহরের বাসায় রেখে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। এই সুযোগে একই কলোনির বাসিন্দা রেখা বেগম লালদিঘিরপাড়ের আবদুস সালামের সঙ্গে তরুণীকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আবদুস সালাম ‘ভালো কাজ’ দেওয়ার প্রলোভন দেখায় তরুণীকে।
গত ৭ জানুয়ারি রেখা বেগম তরুণীটিকে আবদুস সালামের লালদিঘিরপাড়ার বাসায় নিয়ে যায়। পরে বাসার একটি রুমে ২২ দিন আটকে রেখে আবদুস সালাম তাকে ধর্ষণ করে। পরিবারের সদস্যরা সিলেটের বাসায় ফিরে তরুণীকে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নেন। কিন্তু কোথাও না পেয়ে থানায় জিডি করতে চাইলে রেখা বেগম তাদের বাধা দেয় এবং আবদুস সালামের কাছে নিয়ে যায়। তিনি তরুণীটিকে উদ্ধারের ব্যাপারে আশ্বাস দেয়। কয়েকদিন পর পরিবারের সদস্যরা আবারও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কাছে গেলে তিনি জানায় লন্ডন প্রবাসী একটি পরিবারের কাছ থেকে তরুণীটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় ও প্রবাসীর পরিচয় জানতে চাইলে আবদুস সালাম ক্ষেপে যায়। একপর্যায়ে তরুণী মা-বাবাকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি জানালে সালাম তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। পরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।
এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, এ ঘটনার ৩ দিন পর আবদুস সালাম বিয়ের কথা বলে ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে মামলার অন্য আসামি আবদুল মনাফের মাধ্যমে তাকে হবিগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আটকে রেখে সালাম-মনাফসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তরুণীকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে গত ২৬ মার্চ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কৌশলে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের পর বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই তরুণীর বাবা রোববার রাতে বলেন, মামলা দায়েরের পর তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আসামিদের ভয়ে তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা এলাকাছাড়া। তিনি অসুস্থ অবস্থায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়নি। অন্যদিকে মামলার আসামিরাও পলাতক। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।