নিজস্ব প্রতিবেদক:
রোজার বাজারে বেশি দাম পাওয়া এবং কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির ভয়ে কৃষকরা দ্রুত ক্ষেত থেকে তুলে ফেলছেন তরমুজ। এতে তরমুজের আমদানি এতটাই বেড়ে গেছে যে আড়তে সেগুলো রাখার আর জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ট্রাক বা ট্রলারে রেখেই তরমুজ বিক্রির চেষ্টা করছেন। আর দামও নেমে এসেছে অনেক নিচে। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর আড়তে দেখা গেছে এ অবস্থা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ করে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় মুক্তারপুরে আড়তগুলোর সামনে এখন তরমুজের স্তূপ। এরপরও বেশ কয়েকটি ট্রাক তরমুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশের ধলেশ্বরী নদীতেও বেশ কয়েকটি ট্রলার তরমুজ ভর্তি হয়ে অপেক্ষা করছে। এসব ট্রাক ও ট্রলারে লাখ লাখ টাকার তরমুজ রয়েছে। তবে এত তরমুজের ভীড়ে পাইকারদের তেমন একটা দেখা যায়নি। বাধ্য হয়ে ট্রাকে ও ট্রলারে রেখেই তরমুজ বেচা শুরু করেছেন অনেকে। এতেও অবশ্য তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
আড়তে তরমুজ নিয়ে আসা কৃষক ও পাইকাররা জানান, কয়েকদিন আগে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে সাধারণত তরমুজক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজেদের কষ্টের ফসল বাঁচাতে একটু আগেভাগেই তারা তরমুজ তুলে ফেলেছেন। কিন্তু আড়তে এসে তারা দেখছেন প্রতিকূল পরিস্থিতি। আড়তে প্রচুর তরমুজ জমে আছে। অথচ বেচাবিক্রি একেবারেই নেই। কয়েকদিন আগে যে তরমুজ ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন সেগুলোর দাম উঠছে সর্বোচ্চ ১০০-১৫০ টাকা। এভাবে বিক্রি করতে হলে চরম লোকসান দিতে হবে। কিন্তু বিক্রি না হলে কয়েকদিনের মধ্যে এসব তরমুজ পঁচে যাবে। সব মিলিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
এই আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে আসা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টি হয়েছে আমাদের এলাকায়। তাই নষ্ট হওয়ার ভয়ে আগেভাগেই জমি থেকে তরমুজ তুলে আড়তে নিয়ে এসেছিলাম। দুই-তিন দিন ধরে ঘাটে ট্রলার ভিড়িয়ে বসে আছি। কিন্তু তরমুজের বেচাবিক্রি তেমন নেই। কয়েকদিন আগের ৪০০-৫০০ টাকার তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকায়। এই দামে বিক্রি করলে লোকসান। না করলে আরও বেশি লোকসান।
মাহিন এন্টার প্রাইজ নামের এক আড়তের মালিক বলেন, শনিবার থেকেই আড়তে প্রচুর তরমুজের আমদানি হয়েছে, কিন্তু ক্রেতা আগের চেয়ে কমছে। ফলে তরমুজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। আবার দাম অনেক কমলেও পাইকাররা সেভাবে আসছে না।
মুক্তারপুর আড়ত সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক জানান, এখানকার ১২টি আড়তের সবগুলোই তরমুজে ভরপুর। আরও তরমুজ আসছে। কিন্তু জায়গা দেওয়ার সুযোগ নেই। সব মিলিয়ে তরমুজের অবস্থা খুবই খারাপ। ১০-১২ কেজি ওজনের তরমুজ ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও এটি ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, তরমুজ বিক্রেতাদের স্বেচ্ছাচারিতায় তারা ক্ষুব্ধ। পিস হিসেবে কিনে নিয়ে কেজি ৮০-১০০ টাকা করে বিক্রি করেছে। ফলে সবাই তরমুজ বয়কট করেছে। ফলে এক সপ্তাহের মাথাতেই তরমুজ নিয়ে বিপাকে পড়ে গেছে তরমুজচাষীরা।