ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পিলখানার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে: প্রধানমন্ত্রী

ইয়াসিন কবির জয়, ঢাকা :

পনেরো বছর আগে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর কখনো না ঘটে, সেই প্রত্যাশা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “স্বজন হারানোর বেদনা যে কত কঠিন, সেটা বোধহয় আমার থেকে বেশি আর কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। তবে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে।”

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পিলখানার বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন।

পরে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিতে ৭২ বিজিবি সদস্যের মধ্যে পদক পরিয়ে দেন সরকারপ্রধান।

বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণে ভয়াবহ সেই বিদ্রোহের স্মৃতি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিজিবির তৎকালীন মহাপরিচালকসহ যে সকল সদস্য নিহত হয়েছে, আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাই।“

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।

বিডিআরের দরবার হল থেকে সূচনা হওয়া ওই বিদ্রোহের ইতি ঘটে পরদিন। পিলখানায় বিদ্রোহের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জওয়ানরাও বিদ্রোহ করে।

সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

সরকারপ্রধান বলেন, “স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কিন্তু বিজিবির ওপর। সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান, মাদক চালানসহ নারী ও শিশু পাচারের মত বিভিন্ন বিষয় বিজিবি অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে প্রতিরোধ করে থাকে এবং এই চোরাচালানের মালামাল আটক করে থাকে।

“আমাদের দেশমাতৃকা রক্ষায় সদা অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি। তারা দেশের অর্থনীতির জন্য কাজ করে থাকে। প্রায় ১০ লাখের উপর রোহিঙ্গা শরণার্থী আজকে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে আমাদের বিজিবিসহ সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব কাজ করছে। সেই এলাকাটা নজরদারির মধ্যে রাখছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী এবং দেশের অভ্যন্তরে যখনই কোনো সমস্যা হয়, সেই অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তখনও বিজিবি মানুষের পাশে আছে।

জানমাল রক্ষায় সবসময় ভূমিকা রাখে এবং জাতির একটা আস্থা বিশ্বাস আপনারা অর্জন করেছেন। আমরা ইতোমধ্যে এই বিজিবিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন ২০১০ পাস করেছি। সাথে সাথে একটি দক্ষ আধুনিক একটি দ্বিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে বিজিবি গড়ে উঠেছে। জল স্থল এবং আকাশ পথেও দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে।”

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ‘ভিশন ২০৪১’ প্রণয়ন করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই, আমাদের বিজিবিও হবে তেমনি একটি স্মার্ট বাহিনী।

বিজিবি সদস্যদের শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মনে রাখবেন, শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড একটি শৃঙ্খলাবাহিনীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না, শৃঙ্খলা মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।”