আদালত প্রতিবেদক:
রাজশাহীর নিম্ন আদালতের ঐ বিচারককে মাদক মামলার বিচারকাজ থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ হাইকোর্টের নিষিদ্ধ মাদক হেরোইন। সেই হেরোইনের ১১ মামলায় আসামিদের জামিন দিয়েছেন অধস্তন আদালতের এক বিচারক। গত এক বছরে তিনি এসব মামলার আসামিদের জামিন দেন। এসব মাদকের মামলায় হেরোইনের পরিমাণ ছিল সর্বনিম্ন ৫০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত। জামিন প্রদানের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে উচ্চ আদালতে। জারি করা হয় রুল।
ঐ রুলের জবাব দেননি হেরোইন মামলায় জামিনদানকারী রাজশাহীর জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জিয়া উদ্দিন মাহমুদ। জামিন বাতিল প্রশ্নে জারিকৃত রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট উক্ত বিচারককে মাদকের মামলার বিচারকাজ থেকে সরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দেয়।
রায়ে হাইকোর্ট বলে, দেশে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার লাভ করেছে। হেরোইনের মতো নিষিদ্ধ মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই মাদকের বিস্তার রোধে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। সেখানে অধস্তন আদালতের একজন বিচারক হেরোইনের মতো ভয়াবহ মাদকের একের পর এক মামলায় জামিন দেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করছি। আদালত বলে, এভাবে জামিন প্রদানের ঘটনায় ঐ বিচারক তার বিচারকসুলভ মনোভাবের প্রয়োগ করেননি। যদি সেটা করতেন, তাহলে এভাবে একের পর এক মামলায় জামিন প্রদানের ঘটনা ঘটত না। আমরা মনে করি, ঐ বিচারক বিচার আসনে বসে তার অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এ কারণে তাকে মাদকসংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ থেকে সরিয়ে দেওয়াটাই উত্তম বলে মনে করছি।
আদালতের রায় ও পর্যবেক্ষণের বিষয়টি ইত্তেফাককে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। তিনি বলেন, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। সেখানে একজন বিচারক হেরোইনের ১১ মামলায় জামিন দিয়ে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত: ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার হন সেতাবুর রহমান ওরফে বাবু। এ ঘটনায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় গত বছরের ৩ জানুয়ারি মামলা হয় তিন জনের বিরুদ্ধে। এই মামলায় সেতাবুরের জামিন আবেদন গত ২৬ জুন নামঞ্জুর করেন বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ। জামিন নামঞ্জুরের আদেশে বিচারক বলেন, নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘটনার দিন সাক্ষীদের সামনে আসামির দেহ তল্লাশি করে তার প্যান্টের পকেট থেকে ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এমতাবস্থায় উদ্ধারকৃত মালামালের পরিমাণ, আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ধরন ও হাজতবাসের মেয়াদ এবং অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় তার জামিন নামঞ্জুর করা হলো।
এই আদেশ দানের এক মাস পর পহেলা আগস্ট ঐ কোর্টে আবারও জামিন চান আসামি। তখন বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। আদেশে বিচারক বলেন, আসামির আইনজীবী বলেছেন, সেতাবুরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। মানবিক কারণে যে কোনো শর্তে জামিন চান। রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ পিপি জামিন বিষয়ে সরাসরি বিরোধিতা করেন নাই। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়ে গত বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে জেল হাজতে আছে। কেমিক্যাল রিপোর্ট, পিসিপিআর ও আসামির হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হলো।
এই জামিন আদেশ বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে হাইকোর্টে আবেদন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। আবেদনে বলা হয়, এক মাস পূর্বে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বিচারক। কী এমন ঘটেছে যে, তাকে এক মাস পরেই আবার হেরোইনের মতো মাদকের মামলায় জামিন মঞ্জুর করা হলো। যেখানে মামলার সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে। ঐ আবেদনের শুনানি নিয়ে অধস্তন আদালতের বিচারকের দেওয়া জামিন আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। ঐ রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে হাইকোর্টে এফিডেভিট দিয়ে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করা হয়।
ঐ আবেদনে বলা হয়, বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ গোদাগাড়ীর থানার ৯ মামলা এবং চারখালী এবং চারঘাটা থানার দুই মামলাসহ হেরোইনের মোট ১১ মামলায় গত এক বছরের আসামিদের জামিন দিয়েছেন। এসব মামলায় সর্বনিম্ন ৫০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হোরোইন জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার এসব বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি নিয়ে সেতাবুরের জামিন বাতিলের পাশাপাশি তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আত্মসমর্পণ না করলে তাকে গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট বলেছেন, এভাবে জামিন দেওয়া হলো তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক।