নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা
প্রতিটি নাশকতার পর বিরোধীদের ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগ ও পুলিশ প্রশাসনের ‘মজ্জাগত’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা গোটা বাংলাদেশ। সারা দেশে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আনসার মোতায়েন, রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের তল্লাশি থাকার পরও ট্রেনে কারা আগুন দিলো তা বুঝতে বিজ্ঞানী হওয়া লাগে না। আগুন দিয়েছে কারা বাংলাদেশের জনগণসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব জানে। বিএনপির এ নেতা বলেন, দেশের জনগণ জানে বিএনপি একটি উদারনৈতিক শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দল। বিএনপিকে নিয়ে অনেক গল্প সরকার সাজিয়েছে। অনেক মিথ্যা ঘটনা তারা সৃষ্টি করে তার দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনটাই আখেরে ধোপে টেকেনি।
শনিবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পাতানো নির্বাচনের জন্য দেশটাকে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি বানিয়ে ফেলেছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের নৃশংসতম বর্বরোচিত ন্যক্কারজনক ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি। প্রকৃত দোষীদের আটক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সাত সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, এর মধ্যে শনিবার ডিবিপ্রধান সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় নাকি বিএনপি নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে ডিবি। আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে দূষছেন। কী হাস্যকর বয়ান। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ ছয়জনকে তুলে নিয়ে গেছে ডিবি।
রিজভী বলেন, প্রতিটি নাশকতার পর বিএনপির ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগ ও তাদের দলীয় পুলিশ প্রশাসনের মজ্জাগত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারো তামাশার নির্বাচন কন্টকমুক্ত রাখতে, একদফার সংগ্রাম বানচাল করতে পুলিশের প্রটেকশনে আগুন সন্ত্রাস করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যেমনটা তারা ১৯৯৬, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে করেছে, বিভিন্ন সময় যেমন করেছে। প্রায় প্রতিটি আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রশক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটা প্রকাশ হচ্ছে, কোনোটা ঢাকা দিচ্ছে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, গত মাসে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে নাশকতার দুদিন আগেই ডিএমপি থেকে স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দিয়ে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে স্ট্যান্ডবাই ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবা প্রস্তুত রাখতে চিঠি দিয়েছিল। ‘ট্রেনে আগুন’ বিশ্লেষণে জনমনে প্রতীয়মান রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি চিহ্নিত অংশের যোগসাজশে এ নাশকতা সংঘটিত হয়েছে। বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার আগে বিকালে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ছুটি বাতিল করে জরুরি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়।
রিজভী বলেন, গত শুক্রবার এক বিফ্রিংয়ে সুনামগঞ্জ থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর আপন বড় ভাই বর্তমান পুলিশের আইজিপি বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির পরিকল্পনা জেনে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’ একদিন আগে পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিভাগকে বলা হয়েছে, রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলো খালি রাখতে, এমনকি আইসিইউ। আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, এই নির্দেশনাটি কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। পুলিশের এ প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়েছিল, নাশকতার সুস্পষ্ট তথ্য ও পরিকল্পনা তাদের কাছে কিভাবে এলো এবং তারপরও এটি রোধে কেন তারা কোনো ব্যবস্থা নিল না জনমনে এসব প্রশ্ন রয়েছে।