ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাদরাসা পরিচালনায় মজলিসে শূরা ও মজলিসে আমেলার ধারা-উপধারা

মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ছিদ্দিকী :

দেশের শত শত কওমি মাদরাসা পরিচালনার জন্য রয়েছে আলাদা নীতিমালা। এসব মাদরাসায় কখনো কখনো নিয়মনীতি বিরুদ্ধ কাজ হয়। চলে নানা অনিয়ম ও অপতৎপরতা।

কওমি মাদরাসাসমুহে যখন কোনো শিক্ষক বা মুহতামিমের উপর অভ্যন্তরীণ কারো পক্ষ থেকে কিংবা বহিরাগতদের পক্ষ থেকে অভিযোগ কিংবা অনাস্থামূলক বক্তব্য সামনে আসে, তখন করণীয় কি?

এক্ষেত্রে নিয়ম হল, কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ মুহতামিমের কর্ণগোচর হলে প্রথমে তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তার সত্যতা নিশ্চিত করবেন।

তারপর অভিযোগ নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হলে দেখতে হবে, অভিযোগটি চারিত্রিক, আর্থিক কিংবা প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তম স্বার্থ বিরোধী কিনা? যদি এসবের কোনো একটি হয়ে থাকে, তাহলে মুহতামিম পদাধিকার বলে তাকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দেওয়ার অধিকার রাখেন।

পক্ষান্তরে যদি অন্য অভিযোগ হয়ে থাকে, তাহলে নিয়ম হল প্রথমে মুহতামিম ওই শিক্ষককে একান্তে ডেকে নিয়ে মেহমানদারি করিয়ে সম্মানজনকভাবে অভিযোগের বিষয়টির প্রতি ঈঙ্গিত করে তাকে সতর্ক করবেন। এতেও উক্ত শিক্ষক সংশোধিত না হলে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষকদের সম্মিলিত মিটিংয়ে বিষয়টি আলোকপাত করে পুনরায় তাকে সতর্ক করবেন। এতেও তিনি সংশোধিত না হলে তৃতীয় ধাপে তাকে পদাবনতি তথা বিভিন্ন দায়িত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ কিতাব পাঠদান থেকে সরিয়ে দিবেন।
এতেও তিনি সংশোধিত না হলে উক্ত শিক্ষকের অভিযোগটি মজলিসে শূরায় পেশ করবেন। মজলিসে শূরা তাকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সংশোধনের আল্টিমেটাম দিবেন। উক্ত আল্টিমেটামেও সংশোধিত না হলে শূরার মিটিংয়ে তাঁকে সসম্মানে অব্যাহতি দেওয়া হবে!

অনুরূপভাবে মুহতামিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে নিয়ম হল, প্রথমে মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা একজোট হয়ে বহিরাগত লোকজন বা প্রশাসনকে উক্ত বিষয়ে নাক গলানো থেকে নিবৃত্ত করবেন। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকগণ সম্মিলিতভাবে সকল ছাত্রদেরকে এসব থেকে দূরে রাখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তৃতীয়ত, মুহতামিমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি চারিত্রিক, আর্থিক বা প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তম স্বার্থবিরোধী কিনা, মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষকেরা তা যাচাই করে তদন্ত করবেন।
যদি মুহতামিমের বিরুদ্ধে চারিত্রিক, আর্থিক বা প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তম স্বার্থবিরোধী কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাৎক্ষণিক সিনিয়র শিক্ষকগণ মজলিসে শূরার হস্তক্ষেপে তাকে অব্যাহতির ব্যবস্থা করবেন।

পক্ষান্তরে, যদি ভিন্ন কোনো অভিযোগ হয়ে থাকে, তখন প্রথমত সিনিয়র শিক্ষকেরা একান্তে মুহতামিমের সাথে বসে তার আদব রক্ষা করে অভিযুক্ত বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা চালিয়ে মুহতামিমকে সংশোধনের আহ্বান জানাবেন। এতেও তিনি সংশোধিত না হলে তাকে অনতিবিলম্বে শূরার মিটিং আহ্বান করার অনুরোধ জানাবেন। এতেও তিনি সংশোধিত না হলে তার বিরুদ্ধে অভিযুক্ত বিষয়গুলো লিখিত আকারে শূরার সদস্যদের কাছে প্রেরণ করে মজলিসে শূরার সহায়তা কামনা করবেন।
লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির ভিত্তিতে শূরার সভাপতি মিটিং আহ্বান করবেন। শূরার মিটিংয়ে মুহতামিমকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে সংশোধনের আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। এতেও তিনি সংশোধিত না হলে পরবর্তী শূরার মিটিংয়ে মুহতামিম পরিবর্তনের ফয়সালা হবে এবং সাবেক মুহতামিমকে হয়তো সাধারণ শিক্ষক হিসেবে বহাল রাখা হবে, নতুবা সসম্মানে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

এর বাইরে যত উপায়ে শিক্ষক বা পরিচালক অব্যাহতির প্রথা প্রচলিত আছে, সবই কওমী মাদারিসের মূলনীতি বিরুদ্ধ, সুস্পষ্ট যুলুম ও স্বার্থান্বেষী বর্বরতা ছাড়া!