নিজস্ব প্রতিনিধি, বগুড়া
বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) আলোচিত অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনকে বদলি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত আদেশে এই তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, আইএইচটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আমায়াত-উল-হাসিনকে বাগেরহাটের ম্যাটসের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে বদলি করা হলো। একই সঙ্গে তাকে মাদারীপুরের ম্যাটসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ার আইএইচটির সিনিয়র লেকচারার মো. ওমর ফারুক মীরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হলো।
বদলির এই আদেশে আরও বলা হয়, আগামী সাত দিনের মধ্যে বদলিকৃত স্থানে যোগদান করতে হবে। না হলে আট কার্যদিবসে স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য হবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আমায়াত-উল-হাসিন উত্তেজিত হয়ে বলেন, একজন আসামি এখনো বাইরে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে কেন জিজ্ঞেস করছেন না?
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আপনি উপস্থিত ছিলেন কিনা এমন পাল্টা প্রশ্নে তিনি জবাব দেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমিও ছিলাম। আমি আমার রুমে ছিলাম সেই সময়।’
এদিন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বগুড়া আইএইচটিতে আসে। কমিটির সদস্যরা দিনব্যাপী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় ১১ জন শিক্ষার্থীর অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের অল্টারনেটিভ মেডিসিন বিভাগের উপপরিচালক গউসুল আজিম চৌধুরী। অন্য দুজন হলেন ঢাকা আইএইচটির সহকারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান এবং বগুড়া আইএইচটির জুনিয়র প্রভাষক ডা. আব্দুল কাদের।
গউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের সাক্ষাৎকার এখনো চলমান রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করার পর মতামত দিতে পারব। আমরা চাই এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসুক। শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখুক। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে আমরা তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছি। তদন্ত যেন বিলম্বিত না হয়, আমরা খুব শিগগিরই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জমা দেব।
উল্লেখ্য, গত ২৯ আগস্ট দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও হোস্টেলের মিল ম্যানেজার আমিনুল ইসলামকে মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষ। এই মারধরকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ফুঁসে ওঠে। প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ রাখার পর তারা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে উঠে আসে ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষের নানা অপকর্ম ও নির্যাতনের কাহিনি। সেই সঙ্গে কলেজটির অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের চরম অবহেলাও উঠে আসে। এর মধ্যে অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিনের সঙ্গে সজল ঘোষের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও অপকর্মের প্রশ্রয়ের বিষয়গুলো অভিযোগ আকারে তোলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। যদিও শুরু থেকেই সজল ঘোষের কলেজে অপকর্মের সকল ঘটনা জানার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন অধ্যক্ষ।
তবে শিক্ষার্থীরা তখন থেকেই কলেজে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছেন। তারা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- বহিরাগত সন্ত্রাসীকে আশ্রয় ও প্রশ্রয়দানকারী অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনের অপসারণ; সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ইভটিজিংকারী সজল ঘোষের গ্রেপ্তার ও শাস্তি এবং সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।